কথায় আছে, লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায়। ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বে দেখা গেল এই কথার বাস্তব প্রয়োগ। সম্পদ রাশিয়ার, তবে এই সম্পদ থেকে যে মুনাফা আসবে, তা ভোগ করবে রাশিয়ার শত্রু ইউক্রেন। আর সম্পদের মালিক না হয়েও পরের ধনে পোদ্দারি করেছে শিল্পোন্নত সাত দেশ।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভঙ্গুর ইউক্রেনকে পাঁচ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে সাত দেশ অর্থাৎ জি ৭-এর নেতারা। তবে ঋণের এই অর্থ আসবে এই সাত দেশে স্থগিত করা রুশ সম্পদের মুনাফা থেকে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই ঋণ দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার ইতালিতে শুরু হওয়া শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট বা জি-৭ এর তিন দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অন্যের ধনে মাতব্বরি করা এই সাত দেশ হলো আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, জাপান, যুক্তরাজ্য ও ইতালি। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও আয়োজক ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিসহ অন্যান্য দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জি-৭ এর সদস্য না হয়েও উপস্থিত ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাকে আলাদা করে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এই বৈঠকে।
বৈঠক শেষে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইউক্রেনকে অতিরিক্ত প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দিতে রাজনৈতিকভাবে সম্মত হয়েছে জি-৭। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস জি ৭-এর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইউক্রেনকে সাহায্য করার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও।
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোয় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের রুশ তহবিল ও সম্পদ স্থগিত করা হয়েছে। এসব তহবিল ও সম্পদের মুনাফাকে ভিত্তি করেই ইউক্রেনকে বহু বছরমেয়াদি ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে জি-৭। কিন্তু বিষয়টিকে জটিল বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বর্তমানে স্থগিত তহবিলের অধিকার রাশিয়া ভবিষ্যতে কোনদিন ফেরত পেলে, ইউক্রেনকে দেওয়া জি–৭ এর এই ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে।
এদিকে জি-৭ এর এই সিদ্ধান্তকে ইউরোপের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মারিয়া জাখারোভা। কারণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইউরোপীয় সম্পত্তি ও তহবিলের মালিক হচ্ছে রাশিয়া। ইতোমধ্যেই পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেশের প্রধান শেয়ার ও মুদ্রাবাজার মস্কো এক্সচেঞ্জে ডলার ও ইউরোর লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছেন পুতিন।
মন্তব্য করুন