রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যতভাবে পারা যায়, ততভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। কিন্তু কোনোভাবেই রাশিয়াকে হারাতে পারছে না। এত এত অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কোনো কাজেই আসছে না ইউক্রেনের। উল্টো ড্রোনের আঘাতেই কুপোকাত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘দ্য আল্টিমেট ওয়ারমেশিন’ খ্যাত আব্রামস ট্যাংক। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, এসব ড্রোনের ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আব্রামস ট্যাংক সরিয়ে নিয়েছে ইউক্রেন।
ইউরোপের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে দুই বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ থামানো তো দূরের কথা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজোট হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করা নিয়েই মূলত এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া। এরপর রাশিয়াকে ঠেকাতে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে যাবতীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ন্যাটো দেশগুলো। কিন্তু যুদ্ধে বারবার রাশিয়ার কৌশলের কাছে মার খাচ্ছে তারা।
দুজন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তার বরাতে গেল এপ্রিলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা এপি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা আব্রামস এম-ওয়ান-এ-ওয়ান ট্যাংক আপাতত সরিয়ে নিয়েছে ইউক্রেন। কারণ রাশিয়ার ড্রোন যুদ্ধকৌশলের কারণে আব্রামসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব ড্রোন দিয়ে কখন হামলা চালানো হবে, তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ইউক্রেনকে ৩১ আব্রামস ট্যাংক দিতে রাজি হয় যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের দাবি ছিল, রাশিয়ান ফ্রন্টলাইনকে গুঁড়িয়ে দিতে কোটি ডলারের আব্রামস ট্যাংকের বিকল্প নেই। কিন্তু তখন থেকেই রাতারাতি বদলে যায় যুদ্ধক্ষেত্র। বিশেষ করে রাশিয়ার নজরদারি ড্রোন ও হান্টার কিলার ড্রোন, আব্রামস ট্যাংকের জন্য রীতিমতো মরণফাঁদ হয়ে ওঠে। এসব ড্রোন খুব দ্রুত আব্রামস ট্যাংককে শনাক্ত করে হামলা চালায়। ৩১টি ট্যাংকের মধ্যে ৫টি ইতোমধ্যে রাশিয়ার হামলায় কুপোকাত হয়েছে।
উপায়ন্তর না দেখে ফ্রন্টলাইন থেকে আপাতত আব্রামস ট্যাংক সরিয়ে নিয়েছে ইউক্রেন। এখন নতুন কৌশল কী হতে পারে তা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে ঠিক করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাশিয়া টুডে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, রুশ বাহিনী আরও একটি আব্রামস ট্যাংক ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। অনলাইনের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে দাবি করা হয়, কামিকাজে ড্রোন দিয়ে ওই আব্রামস ট্যাংক ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়ান বাহিনী।
ইউক্রেনের রাশিয়া হামলা চালানোর পর পশ্চিমারা কিয়েভের সাহায্যে এগিয়ে আসে। আর রাশিয়ার পতাকাতলে সমবেত হয় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়া। এই দেশগুলোর অস্ত্রশস্ত্র নিয়েই পশ্চিমাদের বারবার চেকমেট দিয়ে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এত এত অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তায়ও যখন কাজ হচ্ছে না, তখন ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়ে যুদ্ধের মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু তারপরও তারা সাফল্যের দেখা পাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন