ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যখন একের পর এক জয় পাচ্ছে রুশ বাহিনী ঠিক তখনই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছেন পুতিন।
পঞ্চম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই সবার আগে আঘাত হানেন ইউক্রেন যুদ্ধের মূল হোতা প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর চেয়ারে। তারপরই একে একে গ্রেপ্তার করা হয় মন্ত্রণালয়ের পাঁচ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে।
কিন্তু যুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার পরও কেন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষেপেছেন পুতিন, ঠিক কী চাইছেন রুশ প্রেসিডেন্ট? তা বেশ রহস্যময়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মূলত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এই ধরপাকড় চলছে। তবে যুদ্ধকালীন এ ধরনের ঘটনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে ভীতি ও হতাশার জন্ম দিয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার অন্যতম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রুশ গণমাধ্যমগুলো বিপুল অঙ্কের সামরিক ঠিকাদারি চুক্তির বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এমনকি তারা প্রকাশ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের সমালোচনাও করছে।
বলা হচ্ছে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন রদবদল ও ধরপাকড়ের নেপথ্যে রয়েছেন ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর আগে তিনি বিদ্রোহের সময় রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভের প্রতি কড়া ভাষায় দুর্নীতির অভিযোগ আনেন।
প্রিগোজিনের ব্যর্থ সামরিক বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল শোইগু ও গেরাসিমভকে পদ থেকে সরানো।
বলা হচ্ছিল, তখন থেকেই সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। নতুন মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিন পরই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে শোইগুকে বরখাস্ত করলেও রেখেছেন নিরাপত্তা পরিষদের সচিবের দায়িত্বে।
কার্নিজ রাশিয়া-ইউরেশিয়া সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেন, পুতিনের স্বার্থ হলো ঘরে যেন শৃঙ্খলা থাকে। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ইউক্রেনে বিজয় অর্জন। সম্প্রতি বেসামরিক ব্যক্তি ও অর্থনীতিবিদ আন্দ্রেই বেলুসভকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করার মধ্য দিয়ে পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, চলতি বাজেটে সামরিক খাতের জন্য রেকর্ড সর্বোচ্চ যে বরাদ্দ দিয়েছেন, তার আওতায় আরও দ্রুত ও সুলভ মূল্যে অস্ত্র কিনতে চান তিনি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চলমান ব্যাপক ধরপাকড়ের নেপথ্যে রয়েছে রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যমগুলো। গুঞ্জন উঠেছে পুতিনের পরবর্তী টার্গেট সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ।
রাশিয়া-ইউরোশিয়া সেন্টারের তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেন, এখন চারপাশে গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে গেরাসিমভকেও উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন