সম্প্রতি স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। গেল ১৫ মে’র ওই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনো হামলায় আছেন তিনি। মস্কোঘেঁষা এই প্রধানমন্ত্রীর ওপর এমন হামলার পর ইউরোপে নতুন করে অপারেশন গ্লাডিওর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আর গুঞ্জন উসকে দেওয়ার মূলে রয়েছে দুজন মার্কিন সাংবাদিক নেবোজসা মালিক ও ওজকান তিকিট।
এই দুই সাংবাদিক বলছেন, অপারেশন গ্লাডিওর অংশ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলার আগের রাতে ইউরোপের আরেকটি দেশের নেতারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ২০১৬ সালের মতো আরেকটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় জরুরি বৈঠক করেন। এরপরই ন্যাটো-সিআইএ’র গোপন সন্ত্রাসী আর্মি নিয়ে বৈশ্বিক আগ্রহ উসকে ওঠে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইউরোপে গুপ্ত এক বাহিনী দিয়ে একটি অভিযান শুরু হয়। ওই অভিযান অপারেশন গ্লাডিও নামে পরিচিত। সম্ভাব্য সোভিয়েত হামলার জন্য এই আধাসামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছিল। ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এই বাহিনীকে সংগঠিত করে ন্যাটো ও সিআইএ। পশ্চিম ইউরোপে সাম্যবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পশ্চিমারা এটাকে রক্ষাকবজ বানিয়েছিল।
১৯৯০-র দশকের শুরুর দিকে ইতালিতে গ্লাডিও’র অস্তিত্ব জানা যায়। তখনকার ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রী গুইলিও আন্দরেওত্তি গ্লাডিও’র কর্মকাণ্ড প্রকাশ করেন। জানা যায়, বামপন্থিরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে বোমা হামলা এবং আততায়ী হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল এই নেটওয়ার্ক। এ নিয়ে পরে ইতালি, বেলজিয়াম ও অন্যান্য দেশে পার্লামেন্টারি তদন্তও হয়।
এমনই একজন গ্লাডিও অপারেটিভ ছিলেন ভিনচেনজো ভিন-সি-গুয়েররা। ইতালিতে একটি গাড়িবোমা হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সালে ভিনচেনজো বলেন, নারী ও শিশুসহ বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশনা পেয়েছিলেন তারা। এর মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোকে বৈধতাই ছিল লক্ষ্য।
গ্লাডিও অপারেশনের প্রকাশিত একটি নথিতে দেখা যায়, ১৯৬৪ সালে ‘পিয়ানো সোলো’ নামে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল ইতালির প্রধানমন্ত্রী আলদো মোরোকে অপহরণ করা, যাতে তিনি বামপন্থি জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে না পারেন। ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, গ্রিস ও তুরস্কে গ্লাডিও টেরর আর্মি অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।
ইউরোপজুড়ে গ্লাডিও বাহিনীর অন্ততপক্ষে ১৩৯টি গুপ্ত অস্ত্র ভান্ডার ছিল। এসব ইউনিটে ডানপন্থি, সাম্যবাদবিরোধী সাবেক সেনা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং ফ্যাসিবাদের সমর্থকরা ব্যক্তিরা যুক্ত থাকতেন। আবার যুক্তরাজ্যের নথিতে দেখা যায়, বেসামরিক ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হতো, যেন সন্দেহ এড়ানো যায়। এই বাহিনীর সদস্যদের গেরিলা যুদ্ধ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
মন্তব্য করুন