ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই কূটনৈতিক সম্পর্কের তলানিতে অবস্থান করছে রাশিয়া-ইসরায়েল সম্পর্ক। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর তা আরও প্রকট হয়ে উঠে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। তারই সবশেষ নজির দেখা গেল ইসরায়েলের ওপর ইরানের ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) নজিরবিহীন হামলার পর। সংঘাত প্রশমনে দুই পক্ষকে আহ্বান জানালেও ইরানের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার ক্ষেত্রে সাফ মানা করে দিয়েছে মস্কো।
স্থানীয় সময় শনিবার গভীর রাতে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে সরাসরি ইরান থেকে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ও তিন শতাধিক বিস্ফোরক ড্রোন নিক্ষেপ করে ইরানের আইআরজিসি। যদিও এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আরব রাষ্ট্র জর্ডানের সহযোগিতায় আকাশেই ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল। ১ এপ্রিল দামেস্কর ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আইআরজিসির তিন শীর্ষ জেনারেলসহ অন্তত ৮ সামরিক কর্মকর্তা নিহতের প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালায় তেহরান।
তারপরই ইরানের এ হামলাকে অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয় বলে বক্তব্য দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে পরাশক্তি রাশিয়াকেও ইরানের নিন্দা জানানোর আহ্বান জানায় তেল আবিব। তবে এমন আবদারের বিপরীতে ইসরায়েলকে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায় রাশিয়া। মস্কো জানায়, রুশ প্রশাসন ইরানের হামলার নিন্দা জানাতে বাধ্য নয়। এমনটা জানান রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
মস্কোর এমন ইসরায়েলবিরোধী আচরণের ব্যাখ্যাও দেন রুশ মুখপাত্র। তিনি জানান, তেল আবিব কখনোই রুশ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইউক্রেনের হামলার নিন্দা জানায়নি। এ সময় রাশিয়ায় নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত সিমোনা হ্যালপেরিনের কড়া সমালোচনাও করেন তিনি।
এক টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া পোস্টে জাখারোভা লিখেন, সিমোনা আমাকে মনে করিয়ে দিন যে রাশিয়ান ভূখণ্ডে কিয়েভের হামলার সময় কখনো ইসরায়েল নিন্দা জানিয়েছিল, অন্তত একবারের জন্য হলেও এমন ঘটনা ঘটলে তা বলুন। আপনি জানেন না, আমিও এমন কোনো ঘটনা মনে করতে পারি না। এ সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সমর্থন করে ইসরায়েলের নিয়মিত বিবৃতির কথাও স্বরণ করিয়ে দেন জাখারোভা।
রুশ মুখপাত্রের এমন বক্তব্যের আগে রিয়া নভোস্তিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরাসয়েলি রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন ইসরায়েল আশা করে রুশ কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ইরানের হামলার নিন্দা জানাবে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার ইরানি চক্রান্তকে মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। তবে ইরানের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানালেও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মস্কো।
মন্তব্য করুন