সশস্ত্র বিদ্রোহের পর ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারের বিরুদ্ধে দেশ ও বিদেশে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়া। এরই অংশ হিসেবে ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বাড়ি ও গ্রুপটির সদর দপ্তরে অভিযান চালিয়েছে রুশ পুলিশ।
গত ২৩ জুন রাশিয়ার সামরিক নেতাদের উৎখাত করতে বিদ্রোহের ঘোষণা দেন ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। ঘোষণার পর পর দেশটির রাজধানী মস্কো অভিমুখে যাত্রাও করে ওয়াগনার বাহিনী। তবে ওইদিন রাতে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট অ্যালেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে আসেন প্রিগোজিন।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ওয়াগনারের সদর দপ্তর। মস্কো দখলের ব্যর্থ অভিযানের পর প্রিগোজিনের ভিলা ও ওয়াগনারের সদর দপ্তরে অভিযান চালিয়েছে রুশ পুলিশ। সেন্ট পিটার্সবার্গের সেই ভিলায় ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। সেখানে তল্লাশিতে এমন অনেক জিনিস উদ্ধার হয়েছে, যা মূলত পরিচয় গোপনের কাজে লাগে। যা দেখে হতবাক অবস্থা পুলিশেরও।
আধুনিক বিশ্বে সম্ভ্রান্ত, অভিজাত ও প্রভাবশালীদের বাড়িতে চোখধাঁধানো গাড়ির সম্ভার পাওয়া গেলেও ‘রুশ অলিগার্ক’ প্রিগোজিন সে সবের ধার ধারেন না। গাড়ি নয়, তার শখ হেলিকপ্টার। আর পাঁচটা ধনী লোকের বাড়িতে যেখানে মিলবে গাড়ি, সেখানে প্রিগোজিনের ভিলায় সযত্নে রাখা হেলিকপ্টার!
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, পুলিশের কয়েকজন কর্মী তল্লাশিতে গিয়ে পথ ভুল করে ওয়াগনারপ্রধানের গোসলখানায় চলে যান। সেখানে গিয়ে তাদের মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। বিশাল আকৃতির গোসলখানায় কোণে মার্বেল পাথরে মোড়া বাথটাব। বাথটাবে পৌঁছানোর জন্য দু’দিকে সিঁড়ি, কালো পাথরে মোড়া। বাথরুমের এক কোণে বিরাট ‘ফ্রেঞ্চ উইনডো’। তার পাশে বসানো দুটি ডেক চেয়ার। সূর্যের তাপ নিতে নিতে গোসলের আদর্শ স্থান। গোসলখানায় গোসল করেন মন না চাইলে রয়েছে সুইমিং পুলও।
আবার অবাক হওয়ার পালা পুলিশের। এবার তারা যান প্রিগোজিনের ভিলার অন্য একটি ঘরে। সেখানে রাখা আলমারি খুলতেই বেরিয়ে আসে থরে থরে সাজানো পরচুলা। তা হলে কি রূপ বদলে ঘুরে বেড়াতেন প্রিগোজিন? না হলে আলমারিতে এত পরচুলা কেন?
অবাক হওয়ার আরও বাকি। প্রিগোজিনের অন্য একটি বসার ঘরে ঢোকার মুখের প্যাসেজে কাঠের মাঝারি আলমারির ওপর যত্নে রাখা একটি অতিকায় কুমিরের খোলস। উপরে চোখধাঁধানো ঝাড়লণ্ঠন।
এবার পুলিশের গন্তব্য ওয়াগনারপ্রধানের কাজের ঘর। সেই ঘরের একদিকে একটি পুল টেবিল। অন্যদিকে কাঠের টেবিলের এক পাশে কালো প্লাস্টিকের প্যাকেটে রাশিয়ার রুবল। গোটা ঘরটি সাজানো বিভিন্ন আকৃতির মানুষের মাথার প্রতিকৃতি দিয়ে।
তবে আসল সম্ভার লুকানো ছিল প্রিগোজিনের শয়ন কক্ষে। অতিকায় পালঙ্কের এক ধারে পুরোদস্তুর অস্ত্রশালা। তাতে দেখা গেছে একটি বিশাল রাইফেল। এ ছাড়া ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পড়ে আছে একাধিক বন্দুক, পিস্তল, রাইফেল। কার্তুজবোঝাই অন্তত দুটি সুটকেসও মিলেছে ডালা খোলা অবস্থায়।
এর পাশেই রয়েছে প্রিগোজিনের খেলার ঘর। সেখানে রাখা বিলিয়ার্ড টেবিল। রয়েছে একটি অতিকায় হাতুড়িও। অনলাইনে এমন একাধিক ছবি, ভিডিও রয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, হাতুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রিগোজিন।
রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রিগোজিনের ভিলা থেকে বিপুল নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে। তাদের অনুমান, ৬৫ লাখ ডলার অর্থমূল্যের রাশিয়ার মুদ্রা পাওয়া গেছে। যদিও ঠিক কত টাকা উদ্ধার হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
এ ছাড়া ওই ভিলা থেকে একাধিক পাসপোর্টও পাওয়া গেছে। সেই পাসপোর্টে নাম রয়েছে ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোজিনের। কিন্তু প্রতিটিতে ছবি আলাদা আলাদা।
মন্তব্য করুন