রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর উপপরিচালক জুলিয়ান্নে গালিনা গ্লসের ছেলে মাইকেল গ্লস। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, শুধু যুদ্ধেই অংশ নেননি, শেষ পর্যন্ত প্রাণও হারান তিনি।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে পূর্ব ইউরোপে মারা যান মাইকেল আলেকজান্ডার গ্লস (২১)। স্বাধীন রুশ গণমাধ্যম ‘আই-স্টোরিজ’-এর তদন্তে তার মৃত্যুর তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এক শীর্ষ কর্মকর্তার ছেলে ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করার সময় নিহত হন। এটি এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত পরিবারের এক তরুণ—যার মা সিআইএর ডিজিটাল উদ্ভাবন বিভাগের উপপরিচালক—রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে যুক্ত হয়ে প্রাণ হারালেন, তা রীতিমতো চমকপ্রদ। এদিকে পারিবারিক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল ‘পূর্ব ইউরোপে’ মাইকেল গ্লসের মৃত্যু হয়। তার মা, জুলিয়েন গ্যালিনা, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিআইএর গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে উপপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। উল্লেখ্য, গ্লসের বাবা-মাও সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন।
মাইকেল গ্লস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে ‘বহু মেরুকরণ বিশ্বের সমর্থক’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার অ্যাকাউন্টে লেখা ছিল, ‘আমি বাড়ি থেকে পালিয়েছি, বিশ্ব ঘুরেছি। ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করি। মাতৃভূমিকে ভালোবাসি।’ তার প্রোফাইলে রাশিয়া ও ফিলিস্তিনের পতাকা ছিল।
‘আই-স্টোরিজ’ জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করা ১,৫০০ বিদেশির মধ্যে গ্লসও ছিলেন। ফাঁস হওয়া ডেটাবেইস থেকে জানা যায়, তিনি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করেন।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে ফ্রন্টলাইনের কঠোর লড়াইয়ে অংশ নিতে রুশ সেনাবাহিনীর একটি অ্যাসল্ট ইউনিটে পাঠানো হয়। পরে সোলেদার শহরের কাছে ইউক্রেনীয় অবস্থানগুলোতে হামলার জন্য তাকে রুশ এয়ারবোর্ন রেজিমেন্টে' মোতায়েন করা হয়।
গ্লসের পরিবার শোকবার্তায় তার ‘মহৎ হৃদয় ও যোদ্ধা আত্মা’র কথা উল্লেখ করেছে। তবে সেখানে রাশিয়া, ইউক্রেন বা তার মৃত্যুর প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে মাইকেল গ্লস লিঙ্গসমতা ও পরিবেশবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ‘রেইনবো ফ্যামিলি’ নামের একটি বামপন্থী সংগঠনের সদস্য ছিলেন। ২০২৩ সালে তুরস্কের ভূমিকম্পের পর তিনি মানবিক সহায়তাতেও অংশ নেন। ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং গাজায় যুদ্ধের কারণে তিনি আমেরিকার ওপর ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিলেন।
তুরস্কে থাকাকালে গ্লস রাশিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এক পরিচিত ব্যক্তি জানান, তিনি ফিলিস্তিনসংক্রান্ত ভিডিও দেখে এবং ষড়যন্ত্রমূলক তথ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে মনস্থির করেন।
রুশ ভিসা পাওয়ার পর গ্লস মস্কোতে যান এবং তার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণের সময় তিনি নেপালি সৈন্যদের সঙ্গে ছিলেন। তিন মাসের প্রশিক্ষণের পর তাকে ইউক্রেন সীমান্তে পাঠানো হয়।
তবে জানা গেছে, মাইকেল সরাসরি যুদ্ধ করতে চাচ্ছিলেন না; বরং তিনি রাশিয়ার নাগরিকত্ব পেতে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের লক্ষ্যেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।
গ্লসের মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তার বন্ধুদের একজন জানিয়েছেন, রুশ কর্তৃপক্ষ গ্লসের পরিবারকে মৃত্যুর খবর জানালেও বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি। শুধু বলা হয়েছে, তিনি ইউক্রেনের ভেতর মারা গেছেন।
এ ঘটনায় রুশ কর্তৃপক্ষ গ্লসের পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানত কি না বা তার মায়ের সিআইএর সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি তারা জানত কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে সিআইএর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে গার্ডিয়ান, তবে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন