প্রেমে ব্যর্থ হলে সন্ন্যাসী হয় মানুষ। এমনটা দেখা যায় কেবল গল্প-সিনেমাতেই। কিন্তু বাস্তবেই তা করে দেখিয়েছেন রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে যিনি নিজেকে পরিণত করেছিলেন একজন ধর্মগুরুতে। প্রেমিকাকে না পাওয়ার সেই কষ্ট কীভাবে ফ্রান্সিসকে আজকের এই বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করল, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।
ছেলেবেলায় সমবয়সী এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। প্রেমিকাকে বলেছিলেন, ‘আমাকে যদি বিয়ে না করো, তাহলে এ জীবন ঈশ্বরের সাধনায় উৎসর্গ করে দেব। কৈশোরে সেই প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ব্যথা বুকে নিয়েই পোপ এতটা পথ একলা পাড়ি দিয়েছেন। ধর্ম সাধনা করেছেন।
সেদিনের সেই ব্যর্থ প্রেমিক তরুণ ফ্রান্সিস তার ধর্ম সাধনান স্বীকৃতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের পোপ হিসেবে। পোপ ফ্রান্সিসের আদি নাম হোর্হে মারিও বেরগোগলিও। ফ্রান্সিস নামটি বেছে নেন পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর। আর তার স্বপ্নের সেই প্রেমিকার নাম এমিলিয়া দামন্তে। ২০১৩ সালে দুজনেরই বয়স যখন ৭৬ বছর, তখন সেই এমিলিয়াই প্রকাশ করেন তাদের গোপন প্রেমের খবর।
এমিলিয়া বলেন, যখন আমি ১২ বছরে পা দিয়েছি। বেরগোগলিও একদিন একটা চিঠি দিল। চিঠিতে সে আমকে তাকে বিয়ে করতে না পারলে সংসারত্যাগী হয়ে ধর্মযাজক হয়ে যাবে বলেও জানিয়ে দিল।
ফ্রান্সিসের ছোট বোন মারিয়া এলেনা বেরগোগলিও সেসময় দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, তার ভাই ছিলেন মৃদুভাষী। পৃথিবীর ১২০ কোটি রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানের নেতা হওয়ার কোনো বাসনাই তার ছিল না। কখনো পোপ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না। আজ তিনি সারা বিশ্বের ক্যাথলিকদের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এখন তাকে সীমাহীন নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হবে। বোন হিসেবে তিনি নিজেও চাননি তার ভাই পোপ হন। কেননা এতে তিনি পরিবার থেকে আরও দূরে চলে যাবেন।
তবে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর ভাইকে নিয়ে গর্বিতই ছিলেন মারিয়া। তিনি বলেন, ‘এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। ইউরোপের বাইরে তার ভাই–ই প্রথম পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। লাতিন আমেরিকা ও তাদের আর্জেন্টিনা থেকে তিনিই প্রথম নির্বাচিত পোপ।
২০১৩ সালে বেরগোগলি পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর এমিলিয়া তাদের অব্যক্ত প্রেমের গল্প প্রকাশ্যে আনেন। তিনি বলেন, তাদের সম্পর্ক ছিল পবিত্র। তবে সেখানে সম্মতি ছিল না তার বাবা-মায়ের। যে কারণে সেই প্রেম কখনো পূর্ণতা পায়নি।
এমিলিয়াকে দেওয়া চিঠিটিতে একটি ঘরের ছবি এঁকেছিল পোপ ফ্রান্সিস। যার ছাদ ছিল লাল রঙের। তার স্বপ্ন ছিল, এমন একটি ঘর কিনবে, বিয়ের পর তারা সেখানে থাকবে। কিন্তু সেই চিঠি গিয়ে পড়ে এমিলিয়ার বাবার হাতে। ফলে বাবার হাতে মার পর্যন্ত খেতে হয় এমিলিয়াকে।
এমিলিয়া জানান, ফ্রান্সিসের দেওয়া চিঠিটি বাবার হাতে পড়ে যাওয়ায় মা-বাবা আমাকে ফ্রান্সিসের থেকে দূরে দূরে সরিয়ে রাখতেন। আর এ কারণে পরবর্তীতে কখনো দেখাও হয়নি তার সঙ্গে। ধীরে ধীরে একপর্যায়ে এমিলিয়ার জীবনের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায় পোপ ফ্রান্সিসের নাম। আর অন্যদিকে প্রেমে ব্যর্থ তরুণ প্রেমিকাকে লেখা তার প্রতিশ্রুতি পূরণে থাকেন সংকল্পবদ্ধ। তিনি হয়ে ওঠেন ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস।
মন্তব্য করুন