বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক। দেশটিতে টানা সপ্তম দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে। এমনকি আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এতে তোপের মুখে পড়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
বুধবার (২৬ মার্চ) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভকারীরা ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত এক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বিরোধী আন্দোলন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এই বিক্ষোভকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি শীঘ্রই স্তিমিত হয়ে যাবে। অন্যদিকে ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় লাখো মানুষ রাজপথে নেমে এরদোয়ানবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন এবং ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের দাবি জানাচ্ছেন।
গত রোববার এক আদালত দুর্নীতির অভিযোগে ইমামোগলুর বিচারের আগ পর্যন্ত কারাগারে রাখার নির্দেশ দেন, যা তিনি অস্বীকার করেছেন। বিরোধী দল, মানবাধিকার সংগঠন ও ইউরোপীয় নেতারা এই গ্রেপ্তারকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও গণবিরোধী’ বলে অভিহিত করেছেন। দেশটি বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ চলছে। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ১,৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইস্তাম্বুলের সরাচানে পার্কে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি বলেই এখানে এসেছি। প্রথমে ভয় ছিল, ভয় কাটিয়েছি।
এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বলেন, যারা রাজপথে আতঙ্ক ছড়ায়, তাদের গন্তব্য অন্ধকার। ২০১৩ সালের গেজি পার্ক বিক্ষোভের পর এটিই তুরস্কের সবচেয়ে বড় গণআন্দোলন। বিরোধী দল সিএইচপি আগামীকাল সরাচানে পার্কে শেষ সমাবেশের ঘোষণা দিলেও কর্মীরা বলছেন, অন্যত্র বিক্ষোভ চলবে।
ইমামোগ্লুকে সমর্থন জানাতে সিলিভরি কারাগারের বাইরেও সমাবেশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক চিকিৎসক বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়ছি। এদিকে, ইস্তাম্বুলের গালাটা ব্রিজে সিট-ইন বিক্ষোভ চলছে। এতে যানবাহন চলাচল অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিক্ষোভের প্রভাবে তুরস্কের আর্থিক বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। লিরার মান কমতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করেছে। অর্থমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক বিনিয়োগকারীদের শান্ত থাকতে বলেছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন তুরস্কের কর্তৃপক্ষকে বাক্ ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানালেও, সাংবাদিকসহ সাত বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আদালতের কাগজে।
রমজানের ইফতারে যুবসমাজকে উদ্দেশ্য করে এরদোয়ান বলেন, অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের শেষ গন্তব্য অন্ধকার। অন্যদিকে, সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল বলেছেন, এই সংগ্রাম থামবে না। তার দল আগামী শনিবার ইমামোগলুকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।
মন্তব্য করুন