তুরস্কে গণতন্ত্র সংকটে? বিরোধীদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করে দেশকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যেই বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন অব্যাহত রেখেছে সরকার।
বিচারের আগেই কারাগারে ইমামোগলু
রোববার (২৩ মার্চ) দুর্নীতির অভিযোগে একরেম ইমামোগলুকে আদালত বিচারের আগেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বিরোধী দলগুলো একে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ এবং ‘সরকারি অভ্যুত্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
একই দিনে তাকে ইস্তাম্বুলের মেয়র পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ সেদিনই তিনি রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচিত হন। ইমামোগলু এক্স (টুইটার) -এ লিখেছেন, তুরস্ক আজ এক চরম বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি হয়েছে। এটি বিচার নয়, বরং গণতন্ত্রের হত্যা।
দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও দমনপীড়ন
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পরপরই রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল, ইজমিরসহ এক ডজনেরও বেশি শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামে। এমনকি এরদোয়ানের শক্ত ঘাঁটি রিজের মতো রক্ষণশীল এলাকাতেও বিক্ষোভ দেখা যায়।
সরকার দ্রুত বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে এবং প্রচারমাধ্যমকে জনরোষের খবর প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপের নির্দেশ দেয়। তুর্কি পুলিশ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের জন্য জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, আমরা কখনোই জনশৃঙ্খলা নষ্ট হতে দেব না।
গণতন্ত্র সংকটে? বিশ্লেষকদের মতামত
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসির বিশ্লেষক সোনার চাগাপতাই বলেন, তুরস্ক এখন গণতন্ত্র থেকে সরাসরি কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে গেছে। বিরোধীদের জন্য রাজনৈতিক ময়দান সংকুচিত হয়ে আসছে।
তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল সতর্ক করে বলেন, এরদোয়ান নিজেও একসময় কারাবরণ করেছিলেন, এখন যেন ইমামোগলুর ক্ষেত্রেও একই ভুল না করা হয়। নতুবা তুরস্কের গণতন্ত্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন, এরদোয়ানের নতুন পরিকল্পনা?
তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন না। তবে পার্লামেন্ট আগাম নির্বাচনের ডাক দিলে, এরদোয়ান ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ইমামোগলুকে কারাগারে রেখে আগাম নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন এরদোয়ান। কারণ, ইমামোগলুই একমাত্র বিরোধী নেতা, যিনি তাকে পরাজিত করার সামর্থ্য রাখেন।
আমি মাথা নত করব না – ইমামোগলু
গ্রেপ্তার হলেও ইমামোগলু তার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আপনারা ব্যালট বাক্সের দিকে ছুটে আসুন। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের সংগ্রাম বিশ্বকে জানান দিতে হবে। আমি মাথা নত করব না।
তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি কি তুরস্কের গণতন্ত্রের শেষ ধাপ, নাকি জনগণের প্রতিরোধে পরিস্থিতির মোড় বদলাবে? এই প্রশ্নই এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
সূত্র: পলিটিকো
মন্তব্য করুন