ইউক্রেনকে দেওয়া সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা প্রদান স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে হোয়াইট হাউসের বরাতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
মঙ্গলবারের (৪ মার্চ) রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের বাগ্বিতণ্ডার জেরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে একসময়ের দুই মিত্রের মধ্যে যে ফাটল তৈরি হয়েছে তা আরও গভীর হলো।
সোমবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন তিনি শান্তির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। আমাদের অংশীদারদেরও সেই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দরকার। আমরা আমাদের সাহায্য স্থগিত করছি এবং পর্যালোচনা করছি যাতে নিশ্চিত করা যায় যে আমাদের দেওয়া সহায়তা একটি সমাধানে অবদান রাখছে।
তবে হোয়াইট হাউস থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্যের পরিমাণ এবং প্রভাব সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি। এ ছাড়া ওই সূত্র সহায়তা স্থগিতাদেশ কতক্ষণ স্থায়ী হবে সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। এমনকি পেন্টাগনও এ ব্যাপারে চুপ। সাংবাদিকরা বিস্তারিত জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে এর চেয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেনি।
অপরদিকে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধের পর জেলেনস্কির অফিস তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। পরে ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইউক্রেনীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করে রয়টার্স। তারাও সাড়া দেয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা বন্ধ হলে যুদ্ধে দ্রুত বিজয়ের কাছাকাছি চলে যাবে রাশিয়া।
নতুন গবেষণায় আইএসডব্লিউ বলছে, ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা হ্রাস যুদ্ধের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে আরও বেশি সুবিধা দিতে পারে, যার ফলে মস্কোর বিজয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে বলছে, এতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোভিয়েত-পরবর্তী অন্য রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য শক্তিপ্রয়োগ করতে উৎসাহিত হতে পারেন, যার মধ্যে বাল্টিক ন্যাটো সদস্য লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া ও লাটভিয়াও রয়েছে। আইএসডব্লিউ আরও বলছে, ইউক্রেনে সহায়তা বন্ধ করলে বিশ্বের মার্কিন প্রভাবও হ্রাস পেতে পারে। তারা বলছে, রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও চীনের এমন একটি জোট বা বলয় রয়েছে, যাদের লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পরাজিত করা। বর্তমানে তারা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্রদের প্রতি তার প্রতিশ্রুতির সীমা পরীক্ষা করছে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ওই বৈঠক চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
মন্তব্য করুন