যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করেছে সৌদি আরব। দেশটির এ পদক্ষেপের ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। এ আয়োজনের মাধ্যমে বৈশ্বিক সংঘাত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে সৌদি আরব। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে তারা।
মঙ্গলবার ( ১৮ ফেব্রুয়ারি) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রদিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারের এই বৈঠকে সৌদি আরব শুধু আয়োজকই নয়, বরং মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও ভূমিকা রাখছে। সৌদি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই বৈঠকের স্থানকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ের জন্যই উপযুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
৩৯ বছর বয়সী সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য এই বৈঠক আয়োজন একটি বড় অর্জন। তিনি তেলসমৃদ্ধ দেশটিকে তার অতীতের মৌলবাদী ইসলামী পরিচয় থেকে বের করে এনে বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত করতে চান।
সৌদি বিশ্লেষক আলি শিহাবি বলেছেন, আমার মনে হয় না এমন কোনো স্থান আছে, যার সঙ্গে ট্রাম্প ও পুতিন উভয়ের এত ভালো ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে।
গত কয়েক বছরে সৌদি আরব বৈশ্বিক সংঘাতের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তার নীতিগুলো পুনর্বিন্যাস করেছে। ক্রাউন প্রিন্সের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশটি তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে ইয়েমেনে যুদ্ধ থেকে সরে আসা, ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোর সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রাখা হয়েছে।
ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্প তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন। এছাড়া সৌদি আরব ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের কোম্পানিতে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং রাজ্যে ট্রাম্প টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও ক্রাউন প্রিন্সের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের পরও সৌদি আরব রাশিয়ার সঙ্গে তেল উৎপাদন নিয়ে সমন্বয় বজায় রেখেছে। ২০২৩ সালে পুতিন সৌদি আরব সফর করেছেন এবং দেশটিকে ব্রিকস জোটে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সৌদি আরবের এই কূটনৈতিক কৌশল বিশ্লেষকদের মতে বেশ সফল হয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে আমেরিকান শিক্ষাবীদ মার্ক ফোগেলের মুক্তিতে ক্রাউন প্রিন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি বন্দি বিনিময়েও মধ্যস্থতা করেছে।
এদিকে মঙ্গলবারের বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা অংশ নিলেও প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলাদাভাবে সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে সৌদি আরব সফর করবেন বলে জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন