যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউক্রেনের নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় যে কোনো সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে, প্রয়োজন হলে যুক্তরাজ্য তার সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) প্যারিসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে এই মন্তব্য করেছেন তিনি। তার এই বক্তব্য ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটেনের দৃঢ় অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। খবর এএফপি।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু ইউক্রেনের জন্যই নয়, বরং এটি ইউরোপের নিরাপত্তা এবং ব্রিটেনের নিজের নিরাপত্তার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে যে, ইউরোপকে নিজেদের সামগ্রিক নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করতে হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর উপদেষ্টার মতে, ইউরোপীয় দেশগুলোকে এখন আরও সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠনে মনোযোগী হতে হবে, যাতে তারা যে কোনো বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।
এ ছাড়া শিগগিরই সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, তবে সেখানে ইউক্রেন বা ইউরোপের কোনো দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ইউরোপীয় নেতারা এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কারণ তারা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছরপূর্তিতে ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে আলোচনা চালানোর চেষ্টা হতে পারে, যা তাদের জন্য এক বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়।
স্টারমার তার নিজের কলামে লিখেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সেনা মোতায়েন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কারণ এটি শুধু ইউক্রেনের জন্যই নয়, বরং ইউরোপের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা রক্ষা করতে যুক্তরাজ্য প্রস্তুত রয়েছে।
এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কের নেতারা। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে প্যারিসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাউন্সিল প্রধান আন্তোনিও কস্তা, ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডার লিয়েন, এবং ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তেসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। ফরাসি প্রেসিডেন্সি জানিয়েছে, বৈঠকে ইউক্রেনের পরিস্থিতি এবং ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে।
সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরাসরি ফোনালাপের পর ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা নতুন গতি পেয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৬ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিলেন, শিগগিরই তিনি পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। তিনি বলেন, পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে আগ্রহী।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার অবস্থান আরও শক্ত করে বলেছিলেন, কিয়েভকে পাশ কাটিয়ে ইউক্রেনের শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো চুক্তিতে আমি সম্মতি দেব না।
তিনি আরও দাবি করেন, ইউরোপকে একত্রিত করে একটি ‘ইউরোপীয় সেনাবাহিনী’ গঠন করা উচিত, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য তালিকায় ইউরোপের নিরাপত্তা নেই এবং বর্তমানে ওয়াশিংটনের ওপর ভরসা করা যায় না।
এদিকে ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কিথ কেলগ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছেন, ইউরোপের মতামত না থাকলেও ইউক্রেন বিষয়ে আলোচনায় ইউরোপীয়দের মতামত গ্রহণ করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় নেতারা একত্রিত হয়ে একটি সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠনের ওপর জোর দিচ্ছেন, যাতে ইউক্রেন এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং তারা যেকোনো ধরনের সংকটের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।
মন্তব্য করুন