প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩য় এআই অ্যাকশন সামিটে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এ ঘোষণাপত্রটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিকাশ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের পথে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, নৈতিক, নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং বিশ্বস্ত হতে হবে। এ ঘোষণাপত্রটি একটি আন্তর্জাতিক কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে, যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সবার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া, মানবতা এবং পৃথিবীকে গুরুত্ব দিয়ে এআইকে টেকসই করার দিকে ফোকাস করা হয়েছে।
এ ঘোষণাপত্রে মোট ৬০টি দেশ ও সংস্থা স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, চীন, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা। সম্মেলনের আয়োজকরা আশা করছেন, পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও কিছু দেশ এতে সই করবে।
এআই অ্যাকশন সামিটে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অস্বীকৃতির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তাদের আশঙ্কা, ঘোষণাপত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশ্বিক শাসন এবং জাতীয় নিরাপত্তার ওপর প্রযুক্তির প্রভাব যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র জানান, তাদের সরকার এআইর গ্লোবাল গভর্নেন্সে আরও সুষম নীতি আশা করছিল, যা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি গভীরভাবে অন্তর্ভুক্ত করবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে ইউরোপের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপের অতিরিক্ত কড়াকড়ি শিল্পের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং এতে প্রযুক্তির উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি চীনের সঙ্গে এই খাতে সহযোগিতা করার বিষয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে নিরাপত্তা ও কৌশলগত ঝুঁকি নিয়ে।
এআই অ্যাকশন সামিটে বিশ্বনেতা, নীতিনির্ধারক এবং শিল্প বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হন, যেখানে তারা এআইর ভবিষ্যৎ এবং এর নীতিগত দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনের ফোকাস ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুরক্ষা, তার কার্যকর ব্যবহারের পথ এবং তা যেন মানবতার উপকারে আসে।
এছাড়া, সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশের ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এটি বিশ্বব্যাপী সমৃদ্ধি এবং সমস্যার সমাধান করতে সহায়ক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে ভারতীয় অর্থনীতি ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করেন এবং ভারতের সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
এআই অ্যাকশন সামিটের মাধ্যমে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরও দৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা আগামী দিনে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মন্তব্য করুন