রাশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ইউরোপীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হলো তিন বাল্টিক দেশ—এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া। ইউরোপে এ ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ ও ‘নতুন যুগের সূচনা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া রাশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। তবে এখন থেকে তিন বাল্টিক দেশের সঙ্গে রাশিয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সুইচ অফ’ করে দেওয়া হয় এবং দেশগুলোকে ইউরোপের বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, এই ‘সুইচ অফ’ করা ছিল প্রতীকী একটি পদক্ষেপ, কারণ দেশ তিনটি ২০২২ সালের মে মাস থেকেই রাশিয়া থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছিল। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করলে ইউরোপ রাশিয়ার ওপর নানা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারই অংশ হিসেবে তিন বাল্টিক দেশ রাশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলো।
লিথুয়ানিয়ার জ্বালানিবিষয়কমন্ত্রী জিরিমান্তাস ভাইসিউনাস জানিয়েছেন, রাশিয়া যাতে জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারণ অতীতে দেখা গেছে, রাশিয়া কখনো কখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে এসব দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য। দেশগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানো এবং নিজেদের বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারা ইউরোপীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
এদিকে তিন দেশের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইইউর জ্বালানি কমিশনার ড্যান জোরগেনসেন বলেন, অবশ্যই এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। যে আলোয় রাশিয়ার ইলেকট্রন নেই, সেই আলো আমি বেশি পছন্দ করি।
এই পরিবর্তনের ফলে তিন বাল্টিক দেশ তাদের বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইউরোপীয় শক্তি নীতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত হলো। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয় নয়, বরং এটি ভূরাজনৈতিক এবং কৌশলগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।
মন্তব্য করুন