রাশিয়াকে দমাতে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) নতুন অস্ত্র প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ওলাফ শলৎসের দেশ। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
জার্মানির ঘোষণা অনুযায়ী, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে রক্ষায় বিদ্যমান সহায়তা বাড়াচ্ছে তারা। নতুন অস্ত্র প্যাকেজটি আগের চালানের সঙ্গে সংযোজিত হবে। এবার পেতে যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১৫টি লিওপার্ড-১-এ-৫ ট্যাংক, দুটি গেপার্ড অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট ট্যাংক, একটি স্বচালিত হাউইটজার, দুটি আইরিস-টি অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট সিস্টেম এবং দুটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা। এসব অস্ত্র ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া সম্প্রতি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিন শহরগুলোতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানছে। এ পরিস্থিতিতে জার্মান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিয়েভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা এটিকে আশীর্বাদ বলা চলে।
বার্লিনের তথ্য মতে, ২০২৩ সালেই অতিরিক্ত আইরিস-টি সিস্টেম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এ প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করা হবে। এখন জার্মানি ইউক্রেনকে গেপার্ড অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট ট্যাংকগুলোর জন্য অতিরিক্ত ৬৫ হাজার রাউন্ড অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট ট্যাংক গোলাবারুদ এবং অন্যান্য অস্ত্রের অতিরিক্ত গোলাবারুদ সরবরাহ করছে।
এ ছাড়া জার্মানি আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রও সরবরাহ করবে। যা যুদ্ধবিমানকে আকাশেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে আক্রমণ করতে সক্ষম। এ ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করা গেলে খুব সহজে শত্রু বিমান ধ্বংস করা সম্ভব।
এদিকে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা বৃদ্ধি জার্মানিকে নতুন শঙ্কায় ফেলছে। কারণ, ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই রুশ হুমকির মুখে আছে ইউরোপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা আতঙ্কিত করে রেখেছে গোটা অঞ্চলকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হতে পারে মস্কো। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে জার্মানিতে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া এ আশঙ্কা করছেন দেশটির সরকার। ঠিক কবে নাগাদ এ হামলা করা হবে তা নিয়েও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে।
সম্প্রতি জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিওস জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে জার্মানিতে হাইব্রিড হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এ জন্য দেশের প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন জার্মান এই মন্ত্রী। পিস্টোরিওস জানান, রাশিয়ার সম্ভাব্য হাইব্রিড আক্রমণের জবাব দিতে বার্লিনকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।
হাইব্রিড হামলা মূলত এক ধরনের সাইবার আক্রমণ। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এই হামলার মাধ্যমে একটি দেশের আইটি, নেটওয়ার্ক এবং বিভিন্ন ডিভাইসে প্রবেশের চেষ্টা করা হয়।
পিস্টোরিওসের মতে, জার্মান সমাজকে বিভক্ত করতে ক্রেমলিনপন্থি গোষ্ঠীগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে। যার ফলে ডানপন্থি এবং জনপ্রিয়তা পাওয়া দলগুলো লাভবান হবে।
তিনি জানান, এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ক্যাম্পেইন চলছে, নির্বাচনী প্রচারণায় হস্তক্ষেপ এবং বিভিন্ন মতবাদকে অর্থায়ন করা হচ্ছে, যারা বলছে, জার্মানি নিজেদের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পুতিনের এই কৌশল ঠেকাতে সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছুই করতে হবে বলে জানান পিস্টোরিওস।
মন্তব্য করুন