ইউক্রেনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের চেষ্টা করছে ফ্রান্স। সাম্প্রতিক দেশটির তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণ এমনটিই দাবি করছে।
দ্য কিয়েভ ইনডিপেন্ডেন্ট শনিবারের (১৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের চিন্তা-ভাবনায় অনেকটা এগিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। আগামী ১৮-১৯ ডিসেম্বর আসন্ন ইইউ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষীর ভূমিকায় ইউরোপীয় সৈন্য মোতায়েনের সম্ভাবনা উত্থাপন করবেন তিনি। ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগে এমনটি আশা করছেন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। যদি শেষ পর্যন্ত রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, তবে ওই বাহিনী মোতায়েন করা হবে। কিন্তু তার আগেই বাহিনী প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ইইউ কূটনীতিক বলেছেন, সম্ভাব্য শান্তি আলোচনায় ইইউর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ধারণাটি উত্থাপিত হবে। এর কার্যক্রম শুরু হতে পারে জানুয়ারিতে। মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের অপেক্ষা করা হচ্ছে। যাতে জো বাইডেনের সময় নেওয়া কোনো উদ্যোগ ট্রাম্পের খামখেয়ালিতে ভেস্তে না যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ওই যুদ্ধ থেকে বের করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে চান। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে এটি বাস্তবায়ন করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে কিয়েভকে বাঁচাবে ইউরোপীয় শক্তি। তারা কিয়েভকে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ১২ ডিসেম্বর গোপন সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ট্রাম্প চান ইউরোপীয় সৈন্যরা ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করুক। ট্রাম্প ৭ ডিসেম্বর প্যারিসে জেলেনস্কি এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁর সাথে বৈঠকের সময় এমন মন্তব্য করেছেন বলে জানা গেছে। এটি স্পষ্ট করে যে, তিনি রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে ইউরোপকে নেতৃত্বের আসনে বসাতে চান।
জেলেনস্কি বৈঠকের সময় ট্রাম্পকে জানিয়েছেন- শান্তি নিশ্চিত করার গ্যারান্টি দরকার। কারণ এক তরফা যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়। জেলেনস্কির অফিসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ বক্তব্য প্রকাশ করেছে।
মাখোঁ ফেব্রুয়ারি থেকেই কিছু বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ১২ ডিসেম্বর তিনি পোল্যান্ড সফর করেন। সেখানে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সাথে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘পাগলামি’ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘জেলেনস্কি ও ইউক্রেন একটি চুক্তি করতে ও এই পাগলামি বন্ধ করতে চায়। সেখানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি করে আলোচনা শুরু করা উচিত।’ এ যুদ্ধে ইউক্রেন প্রায় চার লাখ সেনা হারিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও লেখেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তার সক্রিয় হওয়ার সময়। এতে চীন সাহায্য করতে পারবে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
মন্তব্য করুন