সামরিক শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির দেশ রাশিয়া। পুতিনের এক তুড়িতেই হার মানার কথা ছিল ইউক্রেনের। কিন্তু ২ বছর ৮ মাস ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে কিয়েভ। কারণ, পেছনে থেকে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধটা দীর্ঘ করছে পশ্চিমারা। আর সে কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে আমেরিকা।
মঙ্গলবার নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন মার্কিনিরা। নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কপাল পুড়তে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। কারণ, কিছু একটা করে রাবনের চিতার মতো জ্বলতে থাকা যুদ্ধটা থামিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প যুদ্ধ থামাতে চান। এ জন্য তার কাছে আছে সম্ভাব্য তিনটি পথ। প্রথমত, ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়াকে দিয়ে কিয়েভকে ফ্রন্ট লাইন থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য করতে পারেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধ থামাতে জেলেনস্কির দেশের প্রতি সমর্থন তুলে নিতে পারেন দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার ক্ষমতায় যাওয়া ট্রাম্প। এ জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বন্ধ করে দেবেন তিনি। কিয়েভে যাবে না অস্ত্রভর্তি জাহাজ কিংবা কার্গোর কোনো চালান। তখন, নিজ থেকে হাতগুটিয়ে নিতে বাধ্য থাকবে ইউক্রেন।
তৃতীয়ত, ভোট টানতে যুদ্ধ থামানোর কথা বললেও রাজনীতির নানা মারপ্যাঁচে ট্রাম্প হয়তো তার কথা না-ও রাখতে পারেন। উল্টো কিয়েভকে আরও সহায়তা দিতে পারেন তিনি। যেন হারানো সব অঞ্চলের দখল ফিরে পায় ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে পরাজিত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রনকে একেবারে সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া এবং অতিরিক্ত সহায়তা দিয়ে রাশিয়াকে পরাজিত করে যুদ্ধ বন্ধ করা বাস্তবসম্মত নয়। তাই, ট্রাম্প যেটা করতে পারেন, তা হচ্ছে- রাশিয়ার কাছে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধটাকে থামিয়ে দেওয়া।
কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যায়, এটা হলেই কী সব শেষ, আবারও কী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না দুই দেশ? জবাবটা সহজ নয়। তবে বিশ্লেষকদের মত, দুই কোরিয়ার মতো সীমান্তে যৌথ নিরাপত্তা কমিশন রাখা যেতে পারে। যেখানে সীমান্তের একপাশে রুশ ও অপর পাশে থাকবে ইউক্রেনীয় সেনারা। মাঝখানে বাফার জোন তৈরি করে সেখানে নিযুক্ত করা হবে জাতিসংঘের অধীনে পৃথক একটি কমিশনের পর্যবেক্ষক দলকে। যারা সীমান্তে উত্তেজনা বা উসকানির জন্য দোষীদের চিহ্নিত ও প্রতিবেদন দেবে। যেমনটা পানমুনজমে দুই কোরিয়ার মধ্যে হয়ে আসছে।
যদিও, উপরের সবগুলোই সম্ভাবনার কথা, কনক্রিট কোনো পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত নয়। আগামীর ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যাবে, কিংবা কী ঘটবে, তা নির্ভর করছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ওপর।
মঙ্গলবারের নির্বাচনে যদি রিপাবলিকান শিবির থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তবে ঘটতে পারে এর কোনো একটা। আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস যদি হন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা তবে, যুদ্ধটা চলতে থাকবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
মন্তব্য করুন