ইউরোপের প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্সের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয় পেতে ব্যর্থ হয়েছে কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি তথা আরএন। দেশটির সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটে মারিন লো পেনের নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল র্যালি সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসন নিশ্চিত করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে ফ্রান্সের অনেক মিত্র দেশ। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়; এমন ফলাফলে স্বস্তি ফিরে এসেছে দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝেও।
বলা হচ্ছিল, কট্টর ডানপন্থি দলের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে ফ্রান্সে জনসম্মুখে হিজাব পরা নিষিদ্ধের শঙ্কা ছিল। ফলে প্রথম দফার ভোটে ন্যাশনাল র্যালির এগিয়ে থাকা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ছিল ফরাসি মুসলিমরা। একই সঙ্গে দলটি ক্ষমতায় এলে বিপদে পড়তে পারত দেশটিতে থাকা অভিবাসীরাও। দ্বিতীয় দফা ভোটেও যদি দলটি জয়ী হতো এবং সরকার গঠন করত, তাহলে ফ্রান্সজুড়ে বর্ণ ও ধর্মীয়বিদ্বেষমূলক আক্রমণ ছড়িয়ে পড়তো বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটে বামপন্থি জোটের জয়ের খবরে রাজধানী প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে তরুণ-তরুণীরা উল্লাস ও ব্যাপক করতালিতে মেতে ওঠেন। এদের কেউ কেউ আনন্দে কেঁদে ফেলেন। শহরতলির একটি ক্লাবে থাকা তরুণীদের একজন ১৯ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সারাহ বেনানি। অন্য সবার সঙ্গে এই তরুণীও গভীর আগ্রহে ক্লাবের টেলিভিশনের পর্দার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। টেলিভিশনে বামপন্থি জোট জয়ী হওয়ার খবর ঘোষণার কয়েক মুহূর্ত পর এই তরুণী বলে ওঠেন, ‘আমার খুব নিশ্চিন্ত লাগছে।’
বামপন্থি জোটের বিজয়ের আনন্দে সারাহর চোখ চকচক করছিল। তিনি জানান, ‘আজ রাতে তিনি যখন বাড়িতে ফিরবেন, তাকে এই আতঙ্কে থাকতে হবে না যে কেউ তার হিজাব টেনে খুলে নিতে পারে। ফলাফল ঘোষণার পর সারাহ বেনানির পাশের অনেক তরুণী একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন, নাচতে থাকেন এবং চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘এটা আমাদের বাড়ি।’
২১ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী সেলিম ক্রুচি জানান, ‘গত সপ্তাহে তাদের খুবই মন খারাপ হয়েছিল। সেখানে আশার কিছুই ছিল না। কিন্তু এখন তারা খুবই খুশি, যদিও লড়াই চলবে। আইন নিয়ে লেখাপড়া করা ২২ বছর বয়সী মারিয়াম তোরে জানান, ‘তিনি কাঁদতে চেয়েছিলেন। অবশ্য তখন তিনি সাবওয়েতে ছিলেন। তার বোন তাকে ফোন করে বলে, “তারা জিতে গেছে!” তখন তিনি মেট্রোর ভেতরেই আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন।
মন্তব্য করুন