বয়সে তরুণ হলেও বিশ্বের বাঘা বাঘা নেতাদের ঘোল খাইয়ে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ক্ষমতায় তার বাবা থাকলেও আসলে সৌদি আরবের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন তার হাতেই। তাই অসুস্থ বাবার হয়ে সব সিদ্ধান্ত নেন যুবরাজ মোহাম্মদ। সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ এই নেতা, দেশটিকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছেন, তার অংশ হিসেবে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। তার নেওয়া এমনই এক পদক্ষেপে সরাসরি লাভবান হচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকেই পশ্চিমাদের তোপের মুখে রয়েছেন পুতিন। তার দেশের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে, রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে পশ্চিমারা। বিশেষ করে, দেশটির তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা মস্কোর অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ‘বন্ধু’ পুতিনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মত ঠিক এমনই।
মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অপরিশোধিত তেল রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। গেল কয়েক বছরের মধ্যে এত অল্প পরিমাণ তেল কখনও রপ্তানি করতে দেখা যায়নি রিয়াদকে। দেশটি সদ্য শেষ হওয়া জুন মাসে দিনপ্রতি প্রায় ৫৬ লাখ ব্যারেল করে তেল রপ্তানি করেছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিশ্ব একেবারে থমকে গিয়েছিল। তখন পড়ে গিয়েছিল তেলের বাজারও। অথচ তখনও দিনপ্রতি প্রায় ৫৩ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল রপ্তানি করেছে সৌদি আরব।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেককে নিয়ে তেল উৎপাদনের পরিমাণ কমানোয় নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। দেশটি এই দলে রাশিয়াকেও ভিড়িয়েছে। তেলের উৎপাদন কমিয়ে দাম সমন্বয় করতেই এমন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রিয়াদ। তবে সৌদি আরব রেকর্ড পরিমাণ তেল উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় আখেরে লাভবান হয়েছে রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মস্কো ও আবুধাবিকে বাড়তি সুবিধা দিতেই এমনটা করেছে সৌদি আরব।
গেল মে মাসে ওপেক প্লাসের মিটিংয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। এর ফলে আগামী বছর থেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৩ লাখ ব্যারেল করে তেল উৎপাদন করতে পারবে দেশটি। আবার পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাজারে প্রবেশাধিকার হারিয়েছে রাশিয়া। তবে সৌদি আরবের প্রচলিত তেলের বাজার এখন কার্যত মস্কোর দখলে। এপ্রিলে রাশিয়ার রপ্তানি করা অপরিশোধিত তেলের ৪৮ শতাংশই কিনেছে চীন। ভারত কিনেছে ২৫ শতাংশ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি সৌদি আরব। দ্রুত তেলের উৎপাদন বাড়ানোর মতোও সক্ষমতা রয়েছে দেশটির। ২০২২ সালের মার্চ মাসে রাশিয়ার সঙ্গে ‘দামযুদ্ধে’ জড়িয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছিল সৌদি আরব। তখন তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। তেলের দামের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় খুব ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তবে নিজেদের ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে সৌদি আরবকে তেল নির্ভরতা বের করে আনতে চাইছেন যুবরাজ মোহাম্মদ।
মন্তব্য করুন