যে কোনো উপায়ে পশ্চিমা আধিপত্য ভাঙতে চায় চীন ও রাশিয়া। এ জন্য বেশকিছু জোট ও আঞ্চলিক সংস্থা তৈরি করেছে দেশ দুটি। ২০০১ সালে ‘সাংহাই কোঅপারেশন অরগানাইজেশন’ নামের আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংস্থা তৈরি করে বেইজিং ও মস্কো।
সে সময় বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখলেও এই জোটকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করেনি পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এই জোটের সদস্য করা হয় পশ্চিমাদের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক থাকা ইরানকে। ফলে একে ভূরাজনৈতিক আধিপত্য গড়ার জোট হিসেবে দেখে আসছিল ইউরোপ, আমেরিকা ও তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা।
এবার তাদের আরও এক ‘চোখের কাঁটা’ বেলারুশকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করছেন পুতিন ও শি জিনপিং। অথচ এই দেশটির সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। ফলে, এমন পদক্ষেপে উদ্বেগ ও শঙ্কা জানাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমের একক আধিপত্য রুখে দিতেই সাংহাই জোট সম্প্রসারণ করছেন পুতিন-জিনপিং।
চীনের ফরেইন পলিসি নিয়ে গবেষণা করেন ইভা সিওয়ার্ট। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক বেলারুশের। এমন একটি দেশকে জোটে নেওয়ার মাধ্যমে চীন ও রাশিয়া বোঝাতে চেয়েছে যে এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংস্থা নয়, এটি এখন ভূরাজনৈতিক জোট, যার লক্ষ্য পশ্চিমাদের একক আধিপত্য খর্ব করা।
তথ্য বলছে- বেলারুশ যুক্ত হওয়ার সাংহাই জোটের সদস্য সংখ্যা দাঁড়াবে ১০-এ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় এক চতুর্থাংশই নিয়ন্ত্রণ করে এসব দেশ। আঞ্চলিক এই জোটের রয়েছে দুটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রও-আফগানিস্তান ও মঙ্গোলিয়া। এ ছাড়া তুরস্ক থেকে মিয়ানমার এবং এক ডজনেরও বেশি আরব দেশ এই সংস্থার ডায়ালগ পার্টনার। ফলে এই ইউরোশিয়া অঞ্চলে এই জোটকে টক্কর দেওয়ার মতো পশ্চিমাদের তেমন কোনো বড় জোট নেই।
ইভা সিওয়ার্ট বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জড়িত রাশিয়া। ফলে অনেকটাই একঘরে অবস্থায় পুতিনের দেশ। কিন্তু এই জোটকে ব্যবহার করে পুতিন বিশ্বকে বোঝাচ্ছেন— তিনি একা নন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে চীন। ফলে, তারাও পশ্চিমকে গুরুত্ব না দিয়ে জোটের সম্প্রসারণ বাড়িয়ে তুলছেন। অথচ এত দিন বাণিজ্যের জন্য হলেও এ পথে হাঁটেনি জিপিংয়ের দেশ। এখন যেহেতু তলোয়ার খাপ থেকে বেড় হয়েই গেছে, তাই কৌশলে নয় বরং রাখঢাক ছাড়াই পশ্চিমাদের আধিপত্যকে রুখে দিতে দল ভারী করছে চীন ও রাশিয়া।
মন্তব্য করুন