যুদ্ধ আর সংঘাতের মধ্যেই টিকে থাকতে হয় ইসরায়েলকে। যেখানে প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রই দখলদারদের বন্ধু নয়। এমন বৈরি পরিবেশেই শ্রমবাজার ঠিক রাখতে হয় ইসরাইলকে। কিন্তু গেল বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের হামলার পর, পাল্টে যায় সব হিসাব-নিকাশ। ওই সময় বেশকিছু বিদেশি শ্রমিকও নিহত হন। এরপর ইসরায়েলে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেয় এশিয়ার একটি দেশ।
১৯৯৩ সালের শুরুর দিক থেকে ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের জায়গায় বিপুল পরিমাণে বিদেশি শ্রমিক আনা শুরু করে ইসরায়েল। এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড ছাড়াও চীন, ভারত, নেপাল, ফিলিপাইন, রোমানিয়া ও তুরস্ক থেকে ইসরায়েল শ্রমিক নিয়ে আসে।
২০০৩ সাল নাগাদ ইসরায়েলের শ্রমবাজারের ১০ ভাগই ছিল বিদেশি শ্রমিক। অন্য দেশ থেকে আনা এসব শ্রমিক মূলত ইসরায়েলের কৃষি ও নির্মাণ খাতে কাজ করে। এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশটিতে আসা বিদেশি শ্রমিকদের ২৪ শতাংশ কৃষি খাত এবং ৬০ শতাংশ নির্মাণ খাতে কাজ করে।
গাজায় আট মাস আগে শুরু হওয়া ইসরায়েলের অভিযানের কারণে বিদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে। এরপর বিভিন্ন দেশ, ইসরায়েলে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেয়। সেই তালিকায় রয়েছে থাইল্যান্ডের নামও। সম্প্রতি গেল সোমবার থাইল্যান্ডের শ্রম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আবারও ইসরায়েলে শ্রমিক পাঠাবে। থাই সরকার বলছে, তারা বছরের শেষ নাগাদ ইসরায়েলে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক পাঠানোর টার্গেট নিয়েছে।
গেল বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার আগে ইসরায়েলের কৃষি খাতে প্রায় ৩০ হাজার থাই শ্রমিক কাজ করতেন। ইসরায়েলে বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে অন্যতম বড় গ্রুপ ছিল এটি। কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা ও ইসরায়েলি বাহিনীর লড়াইয়ের মাঝে পড়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ৩৯ জন থাই নিহত হয়।
থাইল্যান্ড সরকারের হিসাব মতে, এ সময় ৩২ জন থাই নাগরিককে জিম্মি করা হয়। তাদের মধ্যে এখনও ৬ জন ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি আছে বলে মনে করা হয়।
থাইল্যান্ডের শ্রম মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, থাই শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালে ইসরায়েলি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে সরকার। মঙ্গলবারই ব্যাংকককে থেকে প্রায় ১০০ শ্রমিকের একটি দল ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। আরেকটি দল যাবে জুলাইয়ের শুরুতে। বহু থাই নাগরিক, বিশেষ করে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম্য এলাকা থেকে দলে দলে মানুষ ইসরায়েল পাড়ি জমায়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হলেও বেশি পারিশ্রমিক আর দেনা শোধের তাড়না থেকেই এমন বিপজ্জনক শ্রমবাজারে প্রবেশ করে থাই নাগরিকরা।
মন্তব্য করুন