মুখে যে কথাই বলুক না কেন, উত্তর কোরিয়ার ভয়ে, সব সময় সিঁটিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার এশীয় মিত্ররা। গেল সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উত্তর কোরিয়া সফরের পর সেই আতঙ্ক বহু গুণে বেড়ে গেছে। উত্তর কোরিয়া আর রাশিয়ার মধ্যে যে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা অনিবার্য ধ্বংস ডেকে আনতে পারে এসব দেশের।
দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রকে আরও নতুন রূপ দিতে চাইছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তাদের সেই অর্জনের পথে বাঁধ সাধছে। তবে পুতিনের সফরের পর আশার আলো দেখছে উত্তর কোরিয়া। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু প্রযুক্তিতে সহায়তা করতে পারে রাশিয়া। এমনটা ঘটলে পালানোর পথ খুঁজে পাবে না যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
পুতিনের এমন সফরের পর এবার উত্তর কোরিয়ার দোরগোড়ায় পরমাণুচালিত মার্কিন বিমানবাহী রণতরী থিওডোর রুজভেল্টকে পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবারই দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান বন্দরে নোঙর গাড়ে। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় থিওডোর রুজভেল্টকে পারস্য উপসাগরে মোতায়েন করা হয়েছিল। অত্যাধুনিক মার্কিন এই বিমানবাহী রণতরী ইরাকি বাহিনীর জন্য দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তবে এবার ভিন্ন ভূমিকায় দেখা যাবে মার্কিন এই রণতরীকে। কিছুদিন পর দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে মিলে যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নেবে থিওডোর রুজভেল্ট। গেল আগস্টেই এই তিন দেশের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা এমন একটি নৌ মহড়া করবে। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্ধি এবং উত্তর কোরিয়ার পরমাণু হুমকি মোকাবিলায় এমন মহড়ার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন দেশ তিনটির নেতারা।
এই নৌ মহড়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রিডম এজ’। তিন দেশের নৌবাহিনী ও সামুদ্রিক বাহিনী অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়্যারফেয়ার এবং এয়ার ডিফেন্স মহড়া চালাবে। এ তথ্য জানিয়েছেন ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ নাইনের কমান্ডার মার্কিন রিয়ার অ্যাডমিরাল ক্রিস্টোফার অ্যালেকজান্ডার। এই মহড়ায় থিওডোর রুজভেল্ট কমান্ড শিপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানান তিনি।
গেল বছরও এই তিন দেশ যৌথ মহড়া চালিয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে সেবারও মিসাইল ডিফেন্স ও অ্যান্টি সাবমেরিন মহড়া চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। প্রায় ২৪ বছর পর উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়ে দেশটির নেতা কিম জং উনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াও পারস্পরিক প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কয়েক দশকের মধ্যে এশিয়ায় রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পর বিচলিত হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা। কিমের সঙ্গে পুতিনের সাম্প্রতিক দহরম মহরম নিয়ে এমনিতেই আতঙ্ক তৈরি করেছিল। কিন্তু পারস্পরিক প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি ও প্রতিরক্ষা চুক্তি, সব সীমা অতিক্রম করে গেছে। তাই উত্তর কোরিয়াকে চাপে রাখতে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
মন্তব্য করুন