ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনঃব্যক্ত করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে কিম এ প্রতিশ্রুতি দেন। বুধবার (১৯ জুন) পিয়ংইয়ংয়ে এ দুই নেতার বৈঠক হয়।
বৈঠকে পুতিন সমর্থনের জন্য উত্তর কোরিয়াকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মস্কো কয়েক দশক ধরে মার্কিন ও তার মিত্রদের আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ লড়াইয়ে উত্তর কোরিয়ার সমর্থন প্রশংসাযোগ্য।
এ দিন দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে একটি চুক্তিতে সই হয়। এ চুক্তিতে কী আছে তা এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে দুই দেশ আক্রান্ত হলে একে অপরকে সাহায্য করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এটিকে কৌশলগত অংশীদারি চুক্তি বলছেন অনেকে। এর আওতায় দুই দেশ নিরাপত্তাগত পারস্পরিক সহযোগিতা করবে।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পুতিন পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছান। তাকে বহনকারী বিমানটির পাহারায় ছিল যুদ্ধবিমান। নজরদারিতে ছিল স্থলভাগ। ২৪ বছর পর তিনি উত্তর কোরিয়া সফর করলেন।
পুতিনকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন কিম। পুতিন পৌঁছালে কিম তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। রাশিয়ার নেতার জন্য লাল গালিচা সংবর্ধনার সঙ্গে ছিল মোটরবাইক শোভাযাত্রা। এ ছাড়া যথারীতি সামরিক সালামের মাধ্যমে পুতিনকে সম্মান জানানো হয়।
সকালে উত্তর কোরিয়ার রীতি অনুযায়ী পুতিনকে স্বাগত জানাতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পুরো শহর সাজে উৎসবের রংয়ে। টানানো হয় বিশেষ বিলবোর্ড। ওই সমাবেশে হাজারো মানুষ অংশ নিয়ে পুতিনকে অভিবাদন জানান। এ সময় লাল গোলাপ, পতাকা, বেলুন হাতে উত্তর কোরিয়ার শিশুদের অভিবাদনে মুগ্ধ হন পুতিন।
সংবর্ধনা পর্বের বাইরে সারা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল দুই নেতার বৈঠকের দিকে। পুতিনের সঙ্গে একান্তে এ বৈঠক করেন কিম। বৈঠকে দুই নেতা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। যার বিস্তারিত জানানো হয়নি।
তবে দুই নেতাই তাদের সামরিক বন্ধন দৃঢ় করতে সম্মত হন। এ জন্য একটি চুক্তির বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। যা স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
এদিকে পশ্চিমাদের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম আদান-প্রদান করা হচ্ছে। দুই নেতা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সামরিক সরঞ্জাম আদান-প্রদানের খবর গুজব। এসব বাস্তবে না ঘটলেও একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট আছে। কোনো ষড়যন্ত্র এতে ফাটল ধরাতে পারবে না। ভবিষ্যতে দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক আরও উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছাবে।
এ সময় পুতিন পরবর্তী বৈঠক মস্কোকে হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উত্তর কোরিয়ার নেতা এতে সায় দিয়েছেন বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
পুতিনের এ সফর ছিল ‘হাই প্রোফাইল’। তার সফরসঙ্গী হয়েছেন- রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরভ, আলেক্সান্ডার নোভাক, প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্সি ক্রিভোরুচকো, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো, পরিবহনমন্ত্রী রোমান স্টারোভোইত, রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের প্রধান ইউরি বরিসভ, রেলওয়েপ্রধান ওলেগ বেলোজেরভ ও রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য অঞ্চলের গভর্নর ওলেগ কোঝেমিয়াকো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কথায় কথায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে রীতিমতো এক্সপার্ট উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। তাই উত্তর কোরিয়াকে জমের মতো ভয় পায় যুক্তরাষ্ট্র। সেই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেই গেল কয়েক বছর ধরে রাশিয়ার মাখামাখি বেড়েছে। এ সফর অনেকটা পুতিনের পক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং সম্পর্ক পাকাপোক্ত করা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। রাশিয়া যখন চোখে অন্ধকার দেখছিল তখনই হঠাৎ করে অস্ত্র দিয়ে মস্কোর সাহায্যে এগিয়ে আসে পিয়ংইয়ং। যদিও তা পশ্চিমা প্রোপাগান্ডা বলে দুই দেশ।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা খুব একটা সফল হয়নি।
পশ্চিমা বিরোধী মনোভাব আর ইউক্রেন যুদ্ধ দেশ দুটিকে কাছে এনেছে। পুতিনের এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এমনটাই বিশ্বাস বিশ্লেষকদের।
তাই এই সফরে তীক্ষ্ণ চোখ রাখছে পর্যবেক্ষকরা। কিমের দেশ থেকে ভিয়েতনামে যাবেন পুতিন। সেখানেই দুই দিন সফর করবেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে খেপিয়ে তুলতে কমিউনিস্ট শাসিত দেশটি সফর করবেন পুতিন।
মন্তব্য করুন