যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো যার নাম শুনলেই চমকে উঠে তিনি হলেন রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অর্থনৈতিক কিংবা সামরিক কোনো ক্ষেত্রেই পশ্চিমাদের ছাড় দেন না রাশিয়ার এই লৌহমানব।
আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোকে কৌশলে তাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এবার হঠাৎ করে আফগানিস্তানকে শক্তিশালি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন পুতিন।
এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার পররাষ্ট্র ও বিচার মন্ত্রণালয় আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারি দলকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এর পরপরই মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এই পদক্ষেপটি প্রয়োজনীয় ছিল।
শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে রাশিয়ার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। এরপরই আফগান সরকারের একটি প্রতিনিধিদল ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে অংশ নিতে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে কাউন্টার এক্সট্রিমিজম প্রজেক্ট এর মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ হান্স-জ্যাকব শিন্ডলার বলেন, আফগানিস্তানের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিনিময়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও কিছু প্রত্যাশা রয়েছে। কিন্তু সেটা এতটা সহজ নাও হতে পারে। কারণ বাড়তি ছাড় নিতে সবসময়ই আফগানিস্তান খুবই ইচ্ছুক, কিন্তু প্রতিদান দেওয়ার বিষয় এলেই সেটা জটিল হয়ে যায়।
আফগানিস্তান অ্যানালিসিস নেটওয়ার্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা টমাস রুটিশ ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে ধাপে ধাপে এগোনোর কৌশল হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন, রাশিয়া আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে স্বীকৃতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান। ২০২১ সালের আগস্টে তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই আফগান সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় তারা। ২০ বছর পর আফগান সরকারকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া পশ্চিমা সামরিক বাহিনী এবং কূটনীতিকরা দ্রুতই আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যায়। এর ছয় মাস পর ২০২২ সালের মার্চে তালেবান ও রাশিয়া আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর কোনো রাষ্ট্রই আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০০৩ সালে রাশিয়াও তালেবানকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে তালেবানের নাম সরিয়ে দেয় কাজাখস্তান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়াও অর্থনৈতিক ফোরামে একই পথ অনুসরণ করতে পারে। ইতোমধ্যে ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্যে এই বিষয়েটি অনেকটাই স্পষ্ট।
মন্তব্য করুন