মিয়ানমার যেন একটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে ছোট আকারের অগ্নুৎপাতও ঘটছে। তবে যে কোনো মুহূর্তে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এমন শঙ্কায় সেনাবাহিনীকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে রীতিমতো কোনঠাসা হয়ে পড়েছে সেনাবাহিনী। এতেই যেন মাথা নষ্ট অবস্থা জান্তা সরকারের। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। করা হচ্ছে বিমান হামলা। নতুন করে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। প্রাণ ভয়ে যে যেভাবে পারছে ছুটছে সীমান্তের দিকে। এ যেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের মতোই আরেকটা রোহিঙ্গা নিধন মিশন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গেল কয়েক দিনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। আশ্রয় নিয়েছে ভারতের সীমানায়। জান্তা বাহিনীর এমন কাণ্ডে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে নয়াদিল্লি। রয়টার্সে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ রাজ্যে সেনাবাহিনীর কিছু ক্যাম্প জালিয়ে দিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা। প্রাণ ভয়ে কিছু সেনা সদস্যও পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ভারত এবং চীন সীমান্তে। সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন রাজ্যে। পরিস্থিতি অনেকটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী শঙ্কা করছে, তাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালাতে পারে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এরই মধ্যে বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনীর সব ক্যাম্প জালিয়ে দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদিরা। অঞ্চলটির বিদ্রোহীরা বলছেন, সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে রক্ষা পেতে আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এক হয়ে যুদ্ধে নেমেছে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে স্বেচ্ছায় তরুণতা স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোতে যোগ দিচ্ছে। নিচ্ছে প্রশিক্ষণও। তারাই রুখে দাঁড়াচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে। ২০২১ সালে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে হঠিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে জান্তা সরকার। তখন থেকেই সু চিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। সেনা শাসনের প্রতিবাদে তখন রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। মিয়ানমারে জাতিগত বিদ্বেষ বহু পুরোনো। বিশেষ করে সবচেয়ে দশকের পর দশক ধরে নির্যাতন আর বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পিড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। ৬ বছর পরও তাদের ফেরত পাঠানো যায়নি নিজ দেশে।
মন্তব্য করুন