আজারবাইজানের একদিনের সামরিক অভিযানে পরাজয়ের পর থেকে দলে দলে নাগোর্নো-কারাবাখ ছাড়ছে আর্মেনীয়রা। এরই মধ্যে বিরোধপূর্ণ এ অঞ্চল ছেড়ে এক লাখের বেশি আর্মেনীয় পাশের দেশ আর্মেনিয়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এর মানে হলো প্রায় সব আর্মেনীয় কারাবাখ ছেড়ে চলে গেছেন। খবর বিবিসি।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র নাজেলি বাগদাসারিয়ান বলেছেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে নাগোর্নো-কারাবাখ থেকে এক লাখ ৪১৭ জন মানুষ আর্মেনিয়ায় প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরও বলছে, এক লাখ মানুষ কারাবাখ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষুধার্ত ও নিঃস্ব। তাদের অবিলম্বে সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিগত আর্মেনীয়দের সাবেক কর্মকর্তা আর্তাক বেগলারিয়ান বলেন, নাগর্নো-কারাবাখ ছেড়ে আসা সবশেষ দলটি শনিবার আর্মেনিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
তিনি বলেন, কয়েকশ মানুষ এখনো সেখানে আছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সরকারি কর্মকর্তা, জরুরি পরিষেবার কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ।
এদিকে কারাবাখের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে মিশন পাঠানোর কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক জানান, ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মধ্যে নাগোর্নো-কারাবাখে মিশন পাঠাতে যাচ্ছে জাতিসংঘ।
কারাবাখ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ছিল। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ হলেও সেটি জাতিগত আর্মেনীয় অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে ১ লাখ ২০ হাজার আর্মেনীয় বসবাস করেন। বিরোধপূর্ণ এ অঞ্চল নিয়ে এরই মধ্যে দুটি যুদ্ধে জড়িয়েছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। প্রথমটি ১৯৯০-এর দশকে এবং দ্বিতীয়টি ২০২০ সালে। ২০২০ সালের যুদ্ধে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগে কারাবাখের বেশকিছু অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় আজারবাইজান।
সম্প্রতি এ অঞ্চলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার সেখানে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেয় আজারবাইজান। সামরিক অভিযানের ২৪ ঘণ্টার মাথায় আর্মেনীয়রা আত্মসমর্পণ করলে যুদ্ধবিরতিতে যায় দুপক্ষ। যুদ্ধবিরতির পরপর আর্মেনীয়দের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা জানায় আজারবাইজান। তবে তাদের এমন আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেননি কারাবাখের নেতারা।
রোববার কারাবাখ রিপাবলিকের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডেভিড বাবায়ান বলেছেন, আমাদের জনগণ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে থাকতে চায় না। ৯৯ শতাংশ মানুষ আমাদের ঐতিহাসিক ভূমি ছেড়ে চলে যেতে চায়।
এরপরই আজারবাইজানের হাতে জাতিগত নিধনের ভয়ে দলে দলে আর্মেনিয়ায় পাড়ি জমাতে থাকেন জাতিগত আর্মেনীয়রা। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে গত সোমবার গভীর রাতে কারাবাখের আঞ্চলিক রাজধানী স্টেপানাকার্টের একটি তেলের ডিপোতে আগুন লেগে অন্তত ৬৮ জন নিহত হয়। তারা সবাই কারাবাখ ছাড়তে তেল নিতে সেখানো জড়ো হয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন