ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার মধ্যে এবার ভয়াবহ হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এবং ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আব্বাসি ঘোষণা করেছেন, পাকিস্তানের ১৩০টিরও বেশি পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শুধু ভারতকে নিশানা করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এসব ক্ষেপণাস্ত্র তোমাদের (ভারতীয়দের) দিকেই তাক করা আছে। এগুলো এমনি এমনি সাজিয়ে রাখা হয়নি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই প্রতিবেশী পারমাণবিক শক্তিধর দেশের নেতাদের এমন বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে এবং বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক নীতিমালা ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স’ মূলত যে কোনো ধরনের ভারতীয় আক্রমণ প্রতিরোধে ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পথ সুগম করেছে। এর লক্ষ্য, ভারতীয় সামরিক নীতির সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকানো এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
অন্যদিকে, ভারতের ‘কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিন’ পরিকল্পিত হয়েছে সীমিত আকারে দ্রুতগতির সামরিক অভিযান চালানোর উদ্দেশ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপরীতমুখী সামরিক কৌশলগুলো দুই দেশের মধ্যে যে কোনো সংঘর্ষের দ্রুততর বিস্তার ঘটাতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে এক প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে দায়ী করেছে। যদিও ভারত সরকার এখনো কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলের সামনে উপস্থাপন করেনি, তারা অতীতের উদাহরণ দেখিয়ে দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের পৃষ্ঠপোষক। এ ধরনের অভিযোগ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি গোটা বিশ্বের জন্যই এক ভয়াবহ হুমকি। অতীতে যখনই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ বা সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনা বেড়েছে, আন্তর্জাতিক মহল শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। এবারও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলো দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এখনকার পরিস্থিতিতে যদি সংঘাতের সূত্রপাত হয়, তাহলে তা সীমিত পর্যায়ে না থেকে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে পারমাণবিক সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে, যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে পুরো বিশ্ববাসীর জন্যই।
মন্তব্য করুন