দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দুটি দেশ- ভারত ও পাকিস্তান। পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা দৃশ্যমান। বহির্বিশ্বের কাছে ‘চিরশত্রু’র তকমাও পেয়েছে তারা। সীমান্তে নিয়মিত সংঘাত ও একাধিকবার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়েছে দেশ দুটি। কাশ্মীর ইস্যু এই সংঘাতের প্রধান কারণ। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের একটি পর্যটনস্থলে নিরপরাধ মানুষের ওপর ঘটা সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে আবারও মুখোমুখী ভারত ও পাকিস্তান।
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশী বৈরী দুটি রাষ্ট্র আরও একবার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনকি লড়াইয়ে কে জয়ী হতে পারে, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তি নিয়ে। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর আকার, কার হাতে কী ধরনের অস্ত্র রয়েছে তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সামরিক শক্তির নিরিখে বিশ্বের চতুর্থ সেরা দেশ এখন ভারত। আর পাকিস্তান আছে ১২ নম্বরে। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ সূচকে ভারতের পয়েন্ট শূন্য দশমিক ১১৮৪। দেশটির মোট সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১৪ লাখ ৫৫ হাজার। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা রয়েছে এই দেশে। ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৪০ কোটিরও বেশি। ফলে এই দেশের রিজার্ভ সেনা সংখ্যার আকারও অনেক বড়। অপর দিকে পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০। রিজার্ভ সেনা ২ লাখ ৮২ হাজার।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের ট্যাঙ্ক রয়েছে ৪ হাজার ২০১টি, পাকিস্তানের রয়েছে ২,৬২৭টি। ভারতের মোট এয়ারক্রাফট রয়েছে ২ হাজার ২২৯টি। অপরদিকে পাকিস্তানের রয়েছে ১ হাজার ৩৯৯টি। যুদ্ধবিমান ভারতের রয়েছে ৫১৩টি, পাকিস্তানের ৩২৮টি। ভারতের হেলিকপ্টার রয়েছে ৮৯৯টি , পাকিস্তানের ৩৭৩টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ভারতের ৮০টি, পাকিস্তানের ৫৭টি।
বিশ্বের যেসব দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, সে তালিকায় ভারত ও পাকিস্তানও আছে। গত মার্চ মাসে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট। যেখানে দাবি করা হয়, ভারতের ভাণ্ডারে মজুত রয়েছে ১৮০টি পারমাণবিক অস্ত্র। আর পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে আছে ১৭০টি।
সার্বিকভাবে বুঝা যায়, শক্তির দিক থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে আছে। তবে যুদ্ধ শুধু সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে না, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, সৈনিকদের মনোবল সবকিছুই যুদ্ধ জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া বর্তমান বিধ্বংসী সব সামরিক অস্ত্রের যুগে যুদ্ধ কাউকেই জেতায় না। উভয় পক্ষই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে তা দুটি দেশকেই পঙ্গু করে দেবে। এমনকি আশপাশের অন্য দেশগুলোর ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়, শান্তির পথই একমাত্র সমাধান।
মন্তব্য করুন