ভিয়েতনামে মঞ্চস্থ হচ্ছে চীন-আমেরিকার পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ নাটকের নতুন দৃশ্য। মঞ্চের মূল খেলোয়াড় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শুল্ক তুষারঝড়’ থেকে একটু রোদ মাখতে যেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে বেরিয়েছেন তিনি। তবে ট্রাম্পের ভাষায়, জিনপিংয়ের এ সফরের মূল এজেন্ডা হলো- কীভাবে আমেরিকাকে টাইট দেওয়া যায়, তার ছক কষা।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পৌঁছেই শি এক কাপ চা খেয়ে বসে গেলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট তো লামের সঙ্গে। এক বসাতেই করেছেন ৪৫টি চুক্তি সই। আর এসব চুক্তির মধ্যে ছিল রেললাইন থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারসহ কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসে ট্রাম্প দাঁড়িয়ে আছেন চোখ ছোট ছোট করে। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, আমি চীনকে দোষ দিচ্ছি না, ভিয়েতনামকেও না। ওরা চমৎকার মিটিং করছে- অথচ আলোচনার টপিক : ‘আমেরিকাকে কীভাবে ঠকানো যায়!’ যেন শি জিনপিং রীতিমতো ‘আমেরিকাকে টাইট দেওয়ার ১০১টি কৌশলের’ কোর্স চালু করে দিয়েছেন হ্যানয়ের হোটেল রুমে!
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’ সারা বিশ্বের শুল্ক ইতোমধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে বেশ ক্ষতবিক্ষত করেছে। ভিয়েতনামের ওপর চাপানো হয়েছে ৪৬% শুল্ক। অথচ এই ভিয়েতনামই আবার যুক্তরাষ্ট্রের বড় রপ্তানি বাজার- একদম মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত : জুতা থেকে জামা, ফ্রিজ থেকে ফোন, সবই যায় আমেরিকায়।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি অবশ্য সুযোগ বুঝে লাফাচ্ছেন! ট্রাম্প শুল্ক বসানো মাত্রই চীনের কারখানাগুলো দক্ষিণে দৌড় দিয়েছে- গন্তব্য ভিয়েতনাম।
এদিকে চীনের হংকং বিষয়ক কর্মকর্তা শিয়া বাওলং আমেরিকাকে উদ্দেশ করে হঠাৎ বললেন, এরা নির্লজ্জ! তারপর যোগ করলেন, আমাদের ভয় পাইয়ে কিছু হবে না- আমাদের আছে পাঁচ হাজার বছরের সভ্যতা।
ভিয়েতনামও কূটনৈতিক দড়ির ওপর হাঁটছে, যেন কোনো সার্কাস! চীনের বিনিয়োগের আহ্বানে মিষ্টি হাসি, আর আমেরিকার মার্কেটে রপ্তানি পাঠিয়ে ভেতরে ভেতরে প্রেম। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান, প্রেমটা শুধু তার সঙ্গে হোক, চীনের সঙ্গে না।
অপরদিকে দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়ে ট্রাম্পের লোকেরা বলে বেড়াচ্ছে, চীন হচ্ছে সেই ধনী আত্মীয়, যিনি বিয়েতে এসে সোনা দিয়ে বিছানা কিনে দেয়, কিন্তু পরদিন সেই সোনাটা বন্ধক রেখে টাকা আদায় করে। চীনের দূতাবাসও পাল্টা বলেছে, আমাদের নিয়ে এসব বাজে কথা বলো না, ব্যাঘাত সৃষ্টি বন্ধ করো।
সব মিলিয়ে বলা যায়, শি জিনপিংয়ের এই সফর যেন ‘বাণিজ্যিক তোপে ভরপুর এক কমেডি থ্রিলার’- যেখানে ট্রাম্প সন্দেহ করছেন, শি জিনপিং বসে ক্যালকুলেটরে হিসাব করছেন : আজ আমেরিকার কোন মার্কেটটা টাইট দিলে সবচেয়ে বেশি চিৎকার করবে?
চীনা প্রেসিডেন্টের সফর শেষ হয়নি, বাকি আছে আরও সফরের। দ্বিতীয় দিনে মালয়েশিয়া, তারপর কম্বোডিয়া- আরও অনেক বৈঠক, অনেক হাসি, কিন্তু ট্রাম্পের দিক থেকে একটাই আশঙ্কা ‘ওরা সবাই মিলে যেন আমারই বিরুদ্ধে দল বাঁধছে!’
মন্তব্য করুন