পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অঞ্চলে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিচ্ছন্নতাবাদীরা। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেলে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় পৌঁছলে সেটির গতিরোধ করে অস্ত্রধারীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ট্রেনটি এখনো হামলাকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটি দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ডন জানিয়েছে, ট্রেন থামানোর জন্য হামলাকারীরা রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং চালকের কক্ষে গুলি চালায়, এতে ট্রেনের চালক আহত হন। এরপর হামলাকারীরা ট্রেনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ও যাত্রীদের জিম্মি করে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ট্রেনটিতে ৯টি বগিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন। তবে হামলাকারীদের সংখ্যা কতজন তা নিশ্চিত করা যায়নি। সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে ১৫৫ যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ২৭ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত ১৭ যাত্রীকে জরুরি চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা এখনো সুনির্দিষ্ট নয়। দেশটির নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
গোষ্ঠীটি দাবি করেছে, পাকিস্তানের বিভিন্ন কারাগারে থাকা তাদের নেতাদের মুক্তির জন্যই তারা এই পন্থা বেছে নিয়েছে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির আল্টিমেটাম দিয়েছে তারা। বন্দিদের মুক্তি না দিয়ে উল্টো কমান্ডো অভিযান চালানো হলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী তারা।
বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি বিএলএ দাবি করেছে, তারা এই হামলার মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারকে তাদের রাজনৈতিক দাবির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরেই বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে। পাকিস্তানের সব থেকে বড় প্রদেশ বালোচিস্তান। বিএলএ, যেটি ২০১১ সাল থেকে সক্রিয়, বেলুচিস্তান প্রদেশের সবচেয়ে বড় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই এই গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় কিন্তু সবচেয়ে অনুন্নত প্রদেশ। প্রায় দেড় কোটি জনসংখ্যার এই অঞ্চল প্রচুর খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী। আছে তামা, প্রাকৃতিক গ্যাসসহ আরও অনেক খনিজ। তবে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব চলছে। আর সেই সুযোগে বেড়ে উঠছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো। বেলুচ জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শোষণ এবং বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে বিতর্কের কারণে তারা বারবার পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
বিএলএ’র দাবি, ১৯৪৮ সালে সাবেক রাজা কালাতের খানকে জোর করে পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রীকরণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করানো হয়, যার পর থেকে তারা বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা এবং প্রদেশের সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০০ সালের শুরুর দিকে এই প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার দাবিতে পাক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিএলএ। তারপর থেকে পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে লড়াই চালাচ্ছে বালোচ বিদ্রোহীরা।
পক্ষান্তরে পালটা গুমখুন, গ্রেপ্তার ও হত্যার মতো অত্যাচার চালিয়ে বিদ্রোহের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হওয়ার পর থেকেই আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে বেলুচিস্তান। অভিযোগ, খনিজ সমৃদ্ধ প্রদেশটিকে কার্যত লুট করছে পাক প্রশাসন। প্রতিদানে বালোচ জনতা পাচ্ছে শুধুই নির্যাতন ও দারিদ্র।
মন্তব্য করুন