আফগানিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আরেজো টিভি’ তালেবান নৈতিকতা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় সময় শনিবার (১ মার্চ) পুনরায় চ্যানেলটি তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে।
রোববার (২ মার্চ) সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ-এর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির কাবুলে অবস্থিত এই টিভি স্টেশনটির দরজায় লাগানো সিলগুলো তালেবান কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে খুলে দেওয়া হয় এবং এর মাধ্যমে টিভি চ্যানেলটি পুনরায় সম্প্রচার শুরু করে।
এর আগে ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বরে তালেবান কর্তৃপক্ষ চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়। এর কারণ ছিল ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং বিদেশি প্রচারণা চালানোর অভিযোগ। এর পরে আরেজো টিভির সাত কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তবে তাদের পরে মুক্তি দেওয়া হয়।
আরেজো টিভির প্রধান বাসির আবিদ জানান, কাবুলে নৈতিকতা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চ্যানেলটির সিল খুলে দেওয়া হয় এবং এর ফলে চ্যানেলটি আবারও সম্প্রচার শুরু করে।
এই ঘটনাটি আফগানিস্তানের গণমাধ্যমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন তালেবান সরকারের অধীনে আফগানিস্তানের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।
আফগানিস্তান সাংবাদিকরা পুনরায় সম্প্রচার শুরু হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বন্ধের ঘটনা ছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা আদৌ ঘটার কথা ছিল না। এর মানে, তালেবান সরকারের এই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং এটি গণমাধ্যমের কাজ করার পরিবেশকে আরও সংকুচিত করেছে।
শুধু টেলিভিশন সম্প্রচার নয়, এর আগে গত মাসের ২৩ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের নারীদের জন্য বিশেষায়িত একমাত্র রেডিও স্টেশন ‘রেডিও বেগম’ সম্প্রচার শুরু করেছে। তালেবান সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কিছু শর্তে কার্যক্রম পুনরায় চালুর অনুমতি দিয়েছে।
রেডিও বেগমের কর্তৃপক্ষ সম্প্রচার চালু করার জন্য একাধিকবার আবেদন করেছিল এবং তাদের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে যে, তারা তাদের কার্যক্রম ‘সাংবাদিকতার নীতিমালা এবং ইসলামিক আমিরাতের বিধি’ অনুযায়ী পরিচালিত করবে।
প্রসঙ্গত, রেডিও বেগমের প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এবং এটি নারীদের জন্য শিক্ষামূলক ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রোগ্রাম প্রচার করত।
তবে, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর রেডিওটি কিছুদিন চালানোর পর বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে কন্টেন্ট সরবরাহ ও লাইসেন্সের অপব্যবহারের অভিযোগে এর সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই দুটি ঘটনার মাধ্যমে আফগানিস্তানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থা এবং তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যেখানে বিদেশি মিডিয়ার সম্পর্ক এবং ইসলামি বিধির প্রতি আনুগত্যের প্রশ্ন ওঠে।
মন্তব্য করুন