সাধারণত আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হয় না চীন। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছে বেইজিং। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার শান্তি আলোচনার প্রতি সমর্থন জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম পলিটিকো ও গার্ডিয়ান তাদের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
তিনি বলেন, ইউক্রেনে শান্তির জন্য সহায়ক সব প্রচেষ্টাকে চীন স্বাগত জানায়। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাম্প্রতিক ঐকমত্যকেও আমরা সমর্থন করি। চীন এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন ওয়াং ই।
শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের অনুপস্থিতি
সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এতে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। তিনি জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং দাবি করেন, ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তার বিনিময়ে দেশটিকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ দিতে হবে।
চীন-রাশিয়া সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে
জি২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন ওয়াং ই। বৈঠকের পর তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত হচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ জানান, শিগগিরই মস্কোতে চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আরও একটি বৈঠক করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের টানাপোড়েন
ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দাবি জানালে জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই চুক্তি না হলে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সহায়তা কমে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেন, আমরা ইউক্রেনকে এক ঐতিহাসিক সুযোগ দিয়েছিলাম, যা তাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে জানান, আমি আমাদের দেশকে বিক্রি করতে পারি না।
বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই সমর্থন মূলত তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতেই দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চীন-রাশিয়া ঘনিষ্ঠ মিত্র, তাই মস্কোর স্বার্থ রক্ষা করাও তাদের উদ্দেশ্যের অংশ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকায় যুদ্ধের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন