আফগানিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তালেবানের একটি প্রতিনিধিদল প্রথমবারের মতো কূটনৈতিক সফরে জাপানে পৌঁছেছে। জাপানে তালেবানের এ সফর কেবল মানবিক সহায়তা চাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং জাপানের সঙ্গে সম্ভাব্য কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাপানি সংবাদমাধ্যম আসাহি শিমবুন ও আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানের পররাষ্ট্র, শিক্ষা, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদল এক সপ্তাহের সফরে জাপানে পৌঁছায়।
এই সফর তালেবানের জন্য বিরল এক ঘটনা, কারণ ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর থেকে তাদের কূটনৈতিক সফর মূলত প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার তারা জাপানের মতো দূরবর্তী ও উন্নত অর্থনীতির দেশে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছে।
সফরে তালেবান প্রতিনিধিরা জাপানি সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে মানবিক সহায়তার অনুরোধ জানাবে এবং একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন নিয়েও আলোচনা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী লতিফ নজরি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে সফরটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তালেবানের সক্রিয় সদস্য হওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি লেখেন, আমরা বিশ্বের সঙ্গে সম্মানজনক সম্পর্ক চাই, যেন একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ, উন্নত ও সমৃদ্ধ আফগানিস্তান গড়ে তোলা যায়। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।
জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা এনএইচকে আফগান কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, তালেবান প্রতিনিধিরা জাপানের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরিকল্পনা করছে।
প্রসঙ্গত, তালেবান সরকার প্রতিবেশী দেশ মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে নিয়মিত কূটনৈতিক সফর করে। তবে এর বাইরে অন্য অঞ্চলে সফর করার ঘটনা খুবই বিরল। তালেবান সরকার এর আগে শুধু ২০২২ ও ২০২৩ সালে নরওয়েতে অনুষ্ঠিত কূটনৈতিক সম্মেলনে অংশ নিতে ইউরোপ সফর করেছিল।
এদিকে ২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাপানের কাবুলস্থ দূতাবাস সাময়িকভাবে কাতারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে জাপান আফগানিস্তানে আবার মানবিক ও কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে।
তালেবান প্রতিনিধিদের জাপান সফরের মাত্র কয়েক দিন আগে কাবুলে গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের বাইরে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা চালায় আইএসআইএল (আইসিস)। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। জাপানের দূতাবাস হামলাটির নিন্দা জানিয়ে এক্স-এ লিখেছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।
তালেবানের এই সফর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোবে, সে বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
মন্তব্য করুন