কোরিয়া যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিভক্ত হয় কোরীয় উপদ্বীপ। একইসঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দুই কোরিয়ার লাখ লাখ পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রাখলেও দুই দেশে অবস্থানের কারণে তাদের সাক্ষাৎ হয়ে যায় বিরল। এমনকি অনেকে জানেনও না সীমান্তের ওপারে তাদের স্বজনরা বেঁচে আছেন কিনা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই দেশের নাগরিকরা চিঠি, ফোন এমনকি ই-মেইলেও কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারেন না। তবে এর মধ্যেই একটি আশার আলো হয়ে ওঠে দুই কোরিয়ার সমঝোতায় গৃহীত উদ্যোগ ‘পারিবারিক পুনর্মিলন কেন্দ্র’।
১৯৮৫ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রথমবারের মতো এই ধরনের পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। ২০০০ সালে দুদেশের মধ্যে এক ঐতিহাসিক সম্মেলনের পর উত্তর কোরিয়ার কুমগং অবকাশযাপন কেন্দ্রকে এ পুনর্মিলনীর আয়োজনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। এর পর থেকেই সেখানে দুদেশের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পরিবারগুলোর অশ্রুসিক্ত পুনর্মিলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ তাদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আবেদন জানালেও এর মধ্যে বাছাই করা মাত্র কয়েকশ আবেদনকারী পারিবারিক পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। প্রথম দিকে নিয়মিত এই আয়োজন করা হলেও দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে এই আয়োজন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। শেষবার ২০১৮ সালে এই পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল।
তবে বৃহস্পতিবার সিউল জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া পারিবারিক পুনর্মিলন কেন্দ্রটি ভেঙে ফেলছে। একইসঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করে দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, মাউন্ট কুমগাং পুনর্মিলন কেন্দ্র ধ্বংস করা একটি অমানবিক কাজ যা বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলির আন্তরিক ইচ্ছাকে পদদলিত করে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির সম্প্রসারণ চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে গত বছর উত্তর কোরিয়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
কিম দক্ষিণকে তার ‘প্রধান শত্রু’ বলে ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি দুই কোরিয়া পুনঃএকত্রীকরণের দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য পরিত্যাগ করার ঘোষণা দিচ্ছেন। এরইমধ্যে পিয়ংইয়ং ‘পারিবারিক পুনর্মিলন কেন্দ্র’ বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নিল। ফলে বিচ্ছিন্ন হাজার হাজার পরিবারের তাদের প্রিয়জনদের আবার দেখার আশা আরও ক্ষীণ হয়ে এলো।
মন্তব্য করুন