পারমাণবিক অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আলোচনায় বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই উত্তর কোরিয়ার। বরং নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই এসব অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পিয়ংইয়ং।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক কড়া বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের এ বার্তা জানায় উত্তর কোরিয়া। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়া জানায়, তাদের পারমাণবিক শক্তি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং শত্রুপক্ষের যে কোনো উসকানির কঠোর জবাব দিতে সক্ষম।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ-তে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খুব স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে কারও স্বীকৃতি পাওয়া বা দরকষাকষির কোনো আগ্রহ আমাদের নেই। আমাদের লক্ষ্য একটাই- দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শত্রুপক্ষের যে কোনো হুমকি প্রতিহত করা।
এদিকে এই বিবৃতিটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা কোরীয় উপদ্বীপে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন যেখানে কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে নিরস্ত্রীকরণে বাধ্য করতে চায়, সেখানে পিয়ংইয়ং এর সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো শর্ত মেনে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারমাণবিক শক্তি আরও জোরদার করব।
উত্তর কোরিয়ার এই কঠোর অবস্থান ট্রাম্পের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদে কিম জং উনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাম্প, যেখানে আংশিক নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে এসে উত্তর কোরিয়া সে পথ থেকে সরে আসছে।
শুক্রবার এক বক্তব্যে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, কিমের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমরা অতীতে একাধিকবার বৈঠক করেছি এবং ভবিষ্যতেও আলোচনার দ্বার খোলা থাকবে।
তবে, ট্রাম্পের এই ইতিবাচক মনোভাবের বিপরীতে উত্তর কোরিয়ার কঠোর বার্তা স্পষ্ট করছে, তারা আপসের পথ থেকে সরে এসে শক্তির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান বজায় রাখতে চায়।
ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারাও উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক বিবৃতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, উত্তর কোরিয়া যদি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি আরও শক্তিশালী করার দিকে যায়, তাহলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ পুনরায় শুরুর কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না পিয়ংইয়ং। বরং তারা নিজেদের সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার এই কঠোর বার্তা মূলত দুটি কারণে দেওয়া হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বোঝানো যে, পিয়ংইয়ং এখন আর নিষেধাজ্ঞার চাপে নত হওয়ার পক্ষে নেই। দেশটির অভ্যন্তরীণ জনগোষ্ঠীর কাছে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সরকারকে আরও জনপ্রিয় করা।
এছাড়া উত্তর কোরিয়ার এই বার্তা কূটনৈতিকভাবে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তবে পিয়ংইয়ং আরও আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, যদি কোনো সামরিক সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে এশিয়া ও বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
বস্তুত, উত্তর কোরিয়ার এই বিবৃতি স্পষ্ট করছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মাথা নত করবে না এবং পারমাণবিক শক্তি দিয়ে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে চায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কীভাবে এই নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবে?
মন্তব্য করুন