মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরপরই পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে চীন। এই পদক্ষেপটি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে, যেখানে দুই দেশ একে অপরকে বাণিজ্যিকভাবে চাপে রাখতে শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
চীন ঘোষণা করেছে যে, মার্কিন কয়লা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এ ছাড়া ক্রুড অয়েল, কৃষি যন্ত্রপাতি, পিকআপ ট্রাক, বড় ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
এই শুল্কগুলো চীনা বাজারে মার্কিন পণ্যের দাম বৃদ্ধি করবে, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
প্রতিবেদনে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন। মার্কিন শুল্কনীতি তাদের জন্য একধরনের চ্যালেঞ্জ এবং এই পরিস্থিতিতে তারা মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। চীনের সরকার শুল্ক আরোপের মাধ্যমে নিজেদের বাজারে মার্কিন পণ্যের প্রবাহ কমাতে এবং বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আমরা কখনোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উসকানি সহ্য করব না... তবে যথারীতি কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা নেব।’’ চীন তাদের জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে, বিশেষ করে একাধিক পণ্য বা খাতের ওপর শুল্ক আরোপ করে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী। তার প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ১০ শতাংশ শুল্ক চীনা পণ্যের ওপর কার্যকর করেছে। ট্রাম্পের দাবি, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঘাটতি কমানো এবং দেশীয় শিল্প রক্ষা করাই তার শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে।
এখন দুই দেশের মধ্যে নতুন শুল্ক আরোপ এবং পাল্টা শুল্কের প্রভাব বিশ্বব্যাপী মহামন্দা এবং আর্থিক সংকটের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, দুই দেশের মধ্যে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পদ্ধতির কার্যকারিতা হ্রাস হওয়ার পাশাপাশি নতুন অর্থনৈতিক সংকটের সূচনা হতে পারে। যেহেতু চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎপাদক এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি বৃহৎ ভোক্তা বাজার, তাদের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
এদিকে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য দেশকে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতি অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ তাদেরও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ববাজারে শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি, চীনও তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করতে পারে এবং মার্কিন পণ্যের পরিবর্তে অন্যান্য দেশের পণ্য গ্রহণে আগ্রহী হতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাব অনেকটাই অন্ধকারে আবৃত। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই বাণিজ্যযুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী ফলস্বরূপ দুই দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে পারে এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারও বিপর্যস্ত হতে পারে। বিশেষ করে, বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সাপ্লাই চেইনেও ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতি – যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্যযুদ্ধ শুধু দুই দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে না, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন অর্থনৈতিক গতিপথ সৃষ্টি করছে, যা সারা বিশ্বে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য করুন