দীর্ঘ ১৫ মাস পর গাজায় যুদ্ধবিরতি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির পর এবার এশিয়ায়ও বিদ্রোহী ও সশস্ত্র গোষ্ঠী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
সোমবার ( ২০ জানুয়ারি) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। শনিবার থেকে এ চুক্তি অনুসারে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে দপ্তরের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ে উভয়পক্ষ আলোচনা করেছে। এ সময় তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য বেইজিংকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত করা দেশটির এবং এই অঞ্চলের সকল পক্ষের জন্য সাধারণ স্বার্থ। এটি চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখে।
মাও বলেন, চীন সক্রিয়ভাবে শান্তি ও সংলাপ প্রচার অব্যাহত রাখবে এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়ায় সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করবে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে মিয়ানমারে বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। গোষ্ঠীগুলো মূলত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ওসিএইচএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই সংঘাত এখন দেশটির সীমান্ত ও অধিকাংশ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ তাদের বাড়ি থেকে নিরাপত্তা ও মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পালাতে বাধ্য হয়েছে।
গত ১৬ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে গত বছর মোট ৫ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার ৬ শতাংশের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অর্থাৎ সাড়ে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশু। গত বছরের শেষ দিকে বিমান হামলা, ড্রোন হামলা, গোলাবর্ষণ, অভিযান ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, সংঘাত, বিপর্যয়, মহামারি, বিস্ফোরক অস্ত্র ও অর্থনৈতিক পতনের কারণে চলতি বছর দেশটিতে আরও ‘ভয়াবহ’ অবস্থা বিরাজ করবে। এ বছর দেশটিতে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ২ কোটি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।
সম্প্রতি দেশটির হালনাগাদ আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মিয়ানমারের জন্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ১৩ লাখে। ২০১৪ সালে আগের আদমশুমারিতে যা ছিল ৫ কোটি ১৫ লাখ। ১০ বছরের ব্যবধানে দেশটিতে জনসংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে এ দুই আদমশুমারির কোনোটিতেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
মন্তব্য করুন