পাকিস্তানের জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান কিনতে চায় বাংলাদেশ। সম্প্রতি এমনই একটি খবর ছড়িয়েছে। পাকিস্তানের গণমাধ্যম বলছে, বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদল বুধবার পাকিস্তান সফর করেছে। তখনই এ নিয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানায় বাংলাদেশ। এরপরই অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। কী এমন ফিচার রয়েছে এই যুদ্ধবিমানে যে বাংলাদেশ এটি কিনতে চায়।
জেএফ-১৭ থান্ডার একটি অত্যাধুনিক হালকা ওজনের সব আবহাওয়ায় চলাচলের উপযোগী মাল্টিরোল ফাইটার জেট। পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স ও চীনের চ্যাংডু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন মিলে এই যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে। এয়ার-টু-এয়ার ও এয়ার-টু-সারফেস ক্যামবেটে জেএফ-১৭ থান্ডারের জুড়ি মেলা ভার। দিন কিংবা রাত, সব অবস্থাতেই সমান তালে কার্যকারিতা দেখাতে পারে জেএফ-১৭ থান্ডার।
এতে রয়েছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ফ্লাইট কন্ট্রোল। এমনকি সর্বশেষ প্রযুক্তির অস্ত্রও বহনে সক্ষম জেএফ-১৭ থান্ডার। তাই এই ক্লাসের অন্য যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে বাড়তি সুবিধা পাবে এটি। মাঝারি এবং নিম্ন উচ্চতায় জেএফ-১৭ থান্ডারের কমবেট ম্যানুভার অনন্য। জেএফ-১৭ এর প্রথম প্রোটোটাইপ এয়ারক্রাফট ছিল এফসি-১। ২০০৩ সালের আগস্টে প্রথমবার সেটি আকাশে উড্ডয়ন করে।
পরবর্তীতে আরও দুটি প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়। কয়েক বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০০৭ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে জেএফ-১৭ থান্ডার উপস্থাপন করা হয়। দুই সিটের এই যুদ্ধবিমান নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান রয়েছে। পাকিস্তানের বিমানবাহিনীতে বর্তমানে ৭ স্কোয়াড্রন জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪৭টির বেশি জেএফ-১৭ থান্ডার তৈরি করা হয়েছে।
পাকিস্তান ছাড়াও মিয়ানমার ও নাইজেরিয়ার বিমানবাহিনীতে রয়েছে এই যুদ্ধবিমান। ব্রিটিশ, স্প্যানিশ, মার্কিন, তুর্কি, ইতালিয়ান ও রাশিয়ান যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে জেএফ-১৭ এ। এছাড়া পাকিস্তান তাদের এফ-১৬ ফাইটারের জন্য কেনা আমেরিকান সমরাস্ত্রগুলোকেও জেএফ-১৭ এ ব্যবহারের উপযোগী করে ডিজাইন করেছে। মার্কিন সমরাস্ত্র ছাড়াও জেএফ-১৭ থান্ডারে অন্যান্য দেশের কিছু সমরাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছ।
৬ হাজার ৪১১ কেজির জেএফ-১৭ থান্ডার টেকঅফের সময় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৭০০ কেজি বহন করতে পারে। এই যুদ্ধবিমানের সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ২ হাজার ২০৫ কিলোমিটার। এতে ব্রাজিলের মার-১ অ্যান্টি রেডিয়েশন ক্ষেপণাস্ত্র, ফ্রান্সের মাটরা ডুরানডাল অ্যান্টি রানওয়ে বোমা, ফ্রান্সের এম-৩৯ অ্যান্টিশিপ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বিকল্প হিসেবে একই ক্লাসের চাইনিজ আর্মামেন্টও ব্যবহৃত হয়েছে।
বাংলাদেশ সামারিক বাহিনীর চাহিদা পূরণে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা দেখা যাচ্ছিল। সেক্ষেত্রে বিমানবাহিনীর বহরে জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমানটি যুক্ত হলে তা হবে বাংলাদেশের সামরিক খাতের জন্য একটি বড় অগ্রসর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন