পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে যখন প্রতিদিন জনসংখ্যা বাড়ছে তখন উল্টো কমছে চীনের জনসংখ্যা। তাও শুধু এক বছর নয়, টানা তিন বছর ধরে চীনের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। শত বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশের তকমা নিয়ে থাকা দেশটি ইতিমধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে গেছে। ভারত ২০২৩ সালে জনসংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যায়।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ২০২৪ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে চীনের। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত এক বছরে চীনের জনসংখ্যা ১.৩৯ মিলিয়ন কমেছে।
তথ্যে দেখা গেছে, চীনের মূল ভূখণ্ডের জনসংখ্যা ২০২৩ সালে ১৪১ কোটি থেকে কমে গত বছর ১৪০ কোটি ৮০ লাখে দাঁড়িয়েছে। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে যাচ্ছে এবং তা আরও দ্রুততর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের ঘাটতিও বাড়ছে।
চীনে ১৯৮০-এর দশক থেকেই ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পাচ্ছে। তবে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো মৃত্যুহার জন্মহারকে ছাড়িয়ে যায়। এর আগে ১৯৬১ সালে, ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ কর্মসূচির কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ২ কোটি মানুষের মৃত্যুর সময় এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল।
জন্মহার বাড়াতে বেইজিংয়ের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দীর্ঘমেয়াদি এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়নি। গত বছর, বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশটিতে ১০.৯৩ মিলিয়ন মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালে ১১.১ মিলিয়ন থেকে ১.৫% হ্রাস পেয়েছে। মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৭.৮৭ থেকে কমে প্রতি হাজারে ৭.৭৬ হয়েছে। তবে জন্মহার কম থাকায় জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
জন্মহার বাড়াতে বেইজিং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। একদিকে অবিবাহিত নারীদের ‘অবশিষ্ট’ আখ্যা দিয়ে বিয়ে প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে বিবাহবিচ্ছেদ ও গর্ভপাতের প্রক্রিয়া কঠোর করা হয়েছে। পাশাপাশি শিশু লালন-পালনের ব্যয় মেটাতে দম্পতিদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ‘এক সন্তান নীতি’ বাতিল করে। এই নীতিটি দীর্ঘদিন ধরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ছিল, তবে এর ফলে পুরুষ সন্তানদের প্রতি সাংস্কৃতিক পক্ষপাতের কারণে জনসংখ্যায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।
২০১৬ সালে সীমা দুই সন্তানের মধ্যে বৃদ্ধি করা হয় এবং ২০২১ সালে একটি আইন করা হয় যাতে পরিবারগুলোকে তিনটি সন্তান ধারণের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে নগর জীবনের উচ্চ ব্যয়, ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং যুব বেকারত্বের উচ্চ হার নতুন প্রজন্মকে সন্তান ধারণে নিরুৎসাহিত করছে। সরকারের নানামুখী চেষ্টায়ও এই প্রবণতা কমছে না।
ধারণা করা হচ্ছে, চীন যদি জনসংখ্যা হ্রাসের এ প্রবণতা রোধ করতে না পারে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দেশটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। এমনকি পরিসংখ্যান মতে, জনসংখ্যা হ্রাসের বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে আগামী ১ হাজার বছর পর শূন্য হয়ে যাবে চীনের জনসংখ্যা।
মন্তব্য করুন