চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় তিব্বতের জিজাংয়ে ৬.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর সহস্রাধিক বার আফটারশক হয়েছে। চীনের ভূমিকম্প সংস্থার এক বিবরণীতে এ তথ্য জানা গেছে।
সংস্থাটি বলছে, মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) মূল কম্পনের পর থেকে এই অঞ্চলে মোট ১,২১১টি আফটারশক হয়েছে, যা ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়।
এদিকে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে পুরো অঞ্চলজুড়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। ঘরবাড়ি হারিয়ে ৬১,৫০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শিনহুয়ার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।
এ ভূমিকম্পে হতাহতদের উদ্ধারে এখনও অভিযান চলছে। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করছে জরুরি পরিষেবার কর্মীরা। সর্বশেষ হিসাবে, ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির পাশাপাশি কমপক্ষে ১২৬ জন নিহত এবং ১৮৮ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
শক্তিশালী ভূমিকম্পে তছনছ হয় চীনের জিজাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বেইজিং সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে অঞ্চলটিতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। বিষয়টি শিনহুয়াকে নিশ্চিত করেছে আঞ্চলিক দুর্যোগ ত্রাণ সদর দপ্তর।
চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্পনের এপিসেন্টার ছিল ২৮.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৪৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ভূমিকম্পটি ১০ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল জিজাং অঞ্চলে। এখানে কম্পনের মাত্রা ছিল ভয়াবহ। যার প্রভাবে প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশের ভবনগুলোও কেঁপে ওঠে। কম্পনটির সূত্রপাতের অবস্থান বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে থাকায় আফটারশক নিয়ে বেশ শঙ্কা জাগায়। তবে শেষমেশ প্রতিবেশী দেশগুলোতে বড় কোনো ধরনের বিপদ ঘটেনি।
ভূমিকম্পে ৩,৬০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিপলস লিবারেশন আর্মির সৈন্যদের সহায়তায় প্রায় ১৪,০০০ কর্মীকে বাসিন্দাদের উদ্ধারে মোতায়েন করা হয়।
তবে হিমাঙ্কের তাপমাত্রায় উদ্ধার অভিযান চালানো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ পরিস্থিতিতেই দিনরাত কাজ করে বিশ্বের ছাদ হিসেবে পরিচিত তিব্বতে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য তাঁবু এবং বিশেষ রান্নাঘর স্থাপন করে সেনারা।
বেইজিং জানিয়েছে, দুর্যোগের মোকাবিলায় চীন সরকার তিব্বতে দ্বিতীয় স্তরের জরুরি পরিষেবা চালু করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সব রাস্তা মেরামত করে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ পরিষেবাও সচল করা হয়েছে। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুতদের ঘর নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সহায়তা প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য করুন