দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তার না করেই ফিরে গেছেন দেশটির তদন্তকারীরা। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়েও তারা ব্যর্থ হন। এ সময় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কমপাউন্ডে উত্তেজনা ও নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের গার্ড এবং সেনাবাহিনীর একটি দল সিউলের কেন্দ্রস্থলে ইউনের বাসভবনে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। শুক্রবার কম্পাউন্ডের অভ্যন্তরে তদন্তকারীরা প্রবেশ করলে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। সেনারা তদন্তকারীদের মূল ভবনের দিকে এগোতে দেয়নি। উচ্চপর্যায়ের আলোচনাতেও সেনারা প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয়নি। তারা গ্রেপ্তারের চেষ্টাকারীদের আদালতের নির্দেশ পালনে বাধা দেন। অবশেষে ছয় ঘণ্টা কমপাউন্ড চত্বরে অবস্থানের পর অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তার না করেই ফিরে যান তারা।
এর আগে সকালে অভিশংসিত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের বাসভবনের কম্পাউন্ডে প্রবেশ করেন দেশটির দুর্নীতি তদন্তকারী কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও পুলিশ। এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। সেটিই দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘটল। আদালতের নির্দেশ থাকার পরও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে বাধার মুখে পড়েন কর্মকর্তারা। কমপাউন্ডের ভেতরে মূল বাসভবনের দিকে এগোতে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাধা দেয়। এ সময় বাইরে ইউনের সমর্থকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তারাও নানাভাবে কর্মকর্তাদের কাজে বাধার সৃষ্টি করেছেন।
এ সময় প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস (পিএসএস) ভেতরে তদন্তকারীদের সঙ্গে ঠিক কী ধরনের আচরণ করছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। এতে বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ পিএসএস-এর শীতলতার গুঞ্জনও ছড়ান। কিন্তু শেষমেশ পিএসএস ও সেনারা অটল ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করতে দেননি।
এভাবে কয়েক ঘণ্টা ধরে অচলাবস্থা শেষে তদন্তকারীরা গ্রেপ্তার প্রচেষ্টা থেকে সরে আসেন। তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবন কমপ্লেক্স ত্যাগ করলে প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা উল্লাস করেন। তারা বিজয়ী স্লোগান দিতে থাকেন।
তদন্তকারীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, অভিশংসিত প্রেসিডেন্টের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ জন্য সমর্থকদের মানবপ্রাচীর, পিএসএস ও সেনা বাধার কথা উল্লেখ করা হয়। আজ ফিরে গেলেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন তারা।
এদিকে সেনা বাধার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই সেনারা পিএসএসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। সিউলের একটি আদালত এ আদেশ জারি করেন। ৩১ ডিসেম্বর বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।
৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারির চেষ্টার অভিযোগে এ পরোয়ানার আদেশ দেওয়া হয়। বিদ্রোহ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একাধিক তদন্তের মুখোমুখি হন। গত দুই সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে একাধিক জিজ্ঞাসাবাদের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার আদেশ উপেক্ষা করেন তিনি। অবশেষে কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির হওয়ার তিনটি সমন উপেক্ষা করার পরে এই পরোয়ানা আসে। এ পরোয়ানা কার্যকর করতে না পারায় সমীকরণ নতুন দিকে মোড় নিল। আদালত এ ব্যাপারে পৃথক পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন।
মন্তব্য করুন