চলতি বছরের জুলাইয়ে শপথগ্রহণের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো নেপালের ক্ষমতায় আসেন কেপি শর্মা ওলি। ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে আজ (৩ ডিসেম্বর) চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, নেপালের অবকাঠামো প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে শি জিনপিংকে রাজি করানোই তার এ সফরের প্রধান লক্ষ্য।
সাধারণত একজন রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতাগ্রহণের পর তার প্রথম বিদেশ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। প্রথম সফরে রাষ্ট্রপ্রধান সেই দেশেই যান যে দেশকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন অথবা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করেন।
দিল্লির সঙ্গে কাঠমান্ডুর শতবর্ষের সম্পর্ক রয়েছে। নেপালের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ধরা হয় ভারতকেই। তাই ঐতিহ্যগতভাবেই নেপালের যে কোনো প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় বসে প্রথমে ভারত সফর করে থাকেন। তবে এবার সেই প্রথার ব্যত্যয় ঘটালেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত ও চতুর্থবারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেওয়া কেপি শর্মা ওলি।
ওলি এবার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য শত বছরের মিত্র দিল্লির বদলে বেইজিংকে বেছে নিয়েছেন। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সফরে প্রেসিডেন্ট শি-জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি-ছিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে ওলির।
২০১৭ সালে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনফ্রাস্টাকচার ইনিশিয়েটিভে’ স্বাক্ষর করে কাঠমান্ডু। তবে প্রকল্প কাঠামো দাঁড় করানো হলেও এখনো কোনো কিছু বাস্তবায়িত হয়নি। নেপাল একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র হওয়ায় এর কোনো সমুদ্র পথ ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই বাণিজ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনে তার বহুমুখী স্থলপথ জরুরি। নেপালের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে দেশটিকে চীনের সঙ্গে স্থলপথে সংযুক্ত করার অঙ্গীকার করেছিলেন শি জিনপিং।
অবশ্য নেপালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের চেয়ে ভারতের প্রভাবই বেশি। যেখানে কাঠমান্ডুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দিল্লির হিস্যা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, সেখানে বেইজিংয়ের আছে মাত্র ১৪ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে চীন।
নেপালে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেপালে এই মুহূর্তে চীনের অর্থায়নের পরিমাণ ৩১ কোটি মার্কিন ডলার। এদিক থেকে ভারতের থেকে কিছুটা এগিয়ে চীন। কাঠমান্ডুর অবকাঠামো খাতে আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে বেইজিং। শি জিনপিং চাইছেন নেপালকে চীনমুখী করতে।
২০১৬ সালে ওলি ক্ষমতায় থাকাকালীন নেপালে তেল রপ্তানি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিল ভারত। তিনি তৎক্ষণাৎ চীনের সঙ্গে জ্বালানি তেলসংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ওই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে নেপালের একমাত্র জ্বালানি সরবরাহকারীর তকমা হারায় ভারত। আর চীনের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন পথ উন্মোচিত হয়। এরপর থেকে নেপালে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় চীন। রাজধানীর ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোখারাতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে বড় অঙ্কের ঋণ দেয় তারা। ওলি চাইছেন, অবকাঠামো খাতে চীনের আরও সহযোগিতা আসুক। উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হোক।
মন্তব্য করুন