রুপকথার গল্পে অনেকসময় অনেক নানা কাহিনী শোনা যায়। তবে বাস্তবে এসব কাহিনীর তেমন কোনো মিল পাওয়া যায় না। এবার বাস্তবে ঘটেছে তেমনি একটি ঘটনা। বাবার পরিচয় খুঁজতে গিয়ে হতবাক হয়েছেন জর্জিয়ার এক নারী। খুঁজতে খুঁজতে তিনি আবিষ্কার করেন যে ফেসবুকে বন্ধু তালিকাতেই রয়েছেন তার বাবা। অথচ তারই খোঁজ করে চলছিলেন তিনি।
সোমবার (০১ ডিসেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিজের জন্মপরিচয়ের খোঁজ করা ওই নারীর নাম তামুনা মুসেরিদজে। ৪০ বছর বয়সী এ নারী জর্জিয়ার নাগরিক। তিনি ৩০ বছর পর্যন্ত একটি পরিবারের কাছে বেড়ে ওঠেন। অথচ তারা তার আসল বাবা-মা ছিলেন না এ বিষয়টি তার জানা ছিল না। পরে একদিন ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে তিনি হতবাক হয়ে পড়েন। সেখানে নিজের জন্মসনদ আবিষ্কার করেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, তামুনার পাওয়া ওই জন্মসনদের সঙ্গে তার জন্মতারিখের মিল ছিল না। ফলে তখন থেকে তার সন্দেহ জাগে। এরপর ২০১৬ সাল থেকে তিনি নিজের বাবা-মায়ের পরিচয় খুঁজতে শুরু করেন। একই বছরে তার দত্তক নেওয়া মা মারা যান।
তামুনা নিজের জন্মপরিচয় খুঁজতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলেন। গ্রুপের নাম দেন ‘ভেদজেব’ ( আমি খুঁজছি)। বাবার পরিচয় খুঁজতে গিয়ে তিনি জার্জিয়ার একটি শিশু পাচার কেলেঙ্কারিও উদঘটন করেন। কয়েক দশক ধরে এটি চলে আসছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাবা-মাকে মিথ্যা বলে এই পাচারচক্রে শিশুদের বিক্রি করে দেওয়া হতো। নবজাতক মারা গেছে বলে তাদের জানানো হতো। এভাবে বহু শিশুর জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
তামুনা পেশায় একজন সাংবাদিক। নিজেও অনেক পরিবারের পুনর্মিলনও করিয়েছেন। তবে নিজের রহস্যের সমাধান তিনি কোনোভাবেই করতে পারছিলেন না। এজন্য ছোটবেলায় চুরি হয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ হয় তার।
ফেসবুকে খোলা গ্রুপের মাধ্যেমে জর্জিয়ার পল্লী অঞ্চলের এক বাসিন্দা জানান, তিনি ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিবলিসিতে গোপনে একটি সন্তান জন্ম দেওয়া এক নারীকে চিনেন। সেই শিশুর জন্মতারিখ আর তামুনার জন্মের তারিখ কাছাকাছি ছিল। ওই নারীই তমুনার জন্মদাত্রী মা হতে পারেন বলে ধারণা করেন তারা।
এরপর তিনি ওই নারীর খোঁজ করা শুরু করেন। ফেসবুকে তার মাকে কেউ চিনলে চানানোর আবেদন জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক নারী জানান, ওই নারী তার আপন খালা। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তারা বিষয়টি নিশ্চিত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রমাণের ভিত্তিতে তামুনা তার মাকে সত্য স্বীকার করাতে রাজি হন এবং বাবার নাম জানতে পারেন। তিনি বলেন, প্রথম দুই মাস আমার কাছে ঘোরের মতো লেগেছে। আমার সঙ্গে কি হচ্ছে তা আমি ভাবতেই পারিনি। এমনকি আমি তাদের খুঁজে পাব তাও ভাবতে পারিনি।
তামুনা জানান, তার বাবার নাম গুরগেন খোরাভা। তিনি এ নাম ফেসবুকে সার্চ দিয়ে দেখেন, নিজের বন্ধু তালিকাতেই রয়েছেন বাবা। প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধু তালিকায় রয়েছেন তিনি। গুরগেন অনেকবারই তামুনার জন্ম পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টার বিষয়টি দেখেছেন। তবে কখনো তিনি বুঝতে পারেননি যে এটিই তার মেয়ে। নিজেদের পরিচয় জানতে পেরে তিনি মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মন্তব্য করুন