চীনের সঙ্গে ইরানের দৃঢ় কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে ফিলিস্তিন ও লেবাননে আগ্রাসন এবং এ ইস্যুতে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কাকে ঘিরে ইরান আরও চীনঘেঁষা হয়ে পড়ে। এবার ইরানের চরম বিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর সেই সম্পর্কের মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা আলী আকবর ভেলায়তি চীন প্রশ্নে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাত্তা দিতে চান না। তার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও চীনের সাথে ইরানের সম্পর্ক অপরিবর্তিত থাকবে।
আইএসএনএর বরাতে সংবাদ প্রকাশ করে আল-আরাবিয়া নিউজ। তাতে বলা হয়, জানুয়ারিতে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন ইরানের বৈদেশিক নীতি, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না।
তিনি বলেন, ‘ইরান ও চীনের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী, ঘনিষ্ঠ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে এবং দেশ দুটির একে অপরের উপর অনেক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।’
তথ্য মতে, তেহরানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত কং পেইউর সঙ্গে বৈঠককালে এ মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। এ বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি তাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
চীন ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ও ইরানের তেলের প্রধান ক্রেতা। পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে ইরানের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার কথা। এমনকি দুর্ভিক্ষ ঘটার সম্ভাবনাও ছিল। কিন্ত এ পরিস্থিতি থেকে ইরানকে বাঁচিয়েছে চীন। এখনো নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল বিক্রিতে সহায়তা করছে তেহরানের অন্যতম এ মিত্র।
কিন্তু ট্রাম্প চরম ইরানবিরোধী। তার প্রথম মেয়াদে ইরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি বাস্তবায়ন করেছিলেন। এবারও তার মনোভাব আগ্রাসী। তার প্রমাণ এখনই মিলছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউসে বসার আগেই প্রশাসন সাজাতে শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে প্রশাসনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। তবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যাকে নিয়োগ দিয়েছেন সেই মাইক ওয়াল্টজকে নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। পাইপলাইনে আরও অনেকে থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প কেন তাকে বেছে নিলেন, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির বাইরে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ফ্লোরিডা থেকে ভোটে জয়লাভ করা মাইক ওয়াল্টজ ঘোর চীনবিরোধী। শুধু তাই নয়, জো বাইডেনের কূটনীতির বড় সমালোচক তিনি।
চীনবিরোধী ওয়াল্টজ কভিড-১৯ ছড়ানোর অভিযোগে এবং চীনের মুসলিম অধ্যুষিত উইঘুর প্রদেশে কভিডের সময় যথোপযুক্ত চিকিৎসা না মেলায় ২০২২ সালের বেইজিং অলিম্পিক বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। সদ্য সমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কিছু দিন আগে একটি আর্থিক নিবন্ধে ওয়াল্টজ এবং সাবেক পেন্টাগন কৌঁসুলি ম্যাথু ক্রোয়েনিগ যৌথভাবে একটি লেখা লেখেন। তাতে দুজনই লিখেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউরোপ এবং আরব দুনিয়া থেকে পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সরানো। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের উচিত ইউক্রেন এবং আরব দুনিয়ার সংঘর্ষ থামাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। সে সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বৃহত্তর আতঙ্ক দমন করতে কৌশলগত নজর সেদিকে ঘোরানো। চীনা আগ্রাসন ঠেকাতে ওয়াল্টজ বরাবর মার্কিন সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করার পক্ষে আওয়াজ তোলেন।
এবার ওয়াল্টজ চীনকে চেপে ধরলে স্বভাবতই চাপে পড়বে ইরান। বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল বিক্রি ইরানের জন্য আরও কঠিন হতে পারে।
মন্তব্য করুন