বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া ও চীনকে টেক্কা দিতে চায় তুরস্ক। এ জন্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে মহাদেশটিতে চীন ও রাশিয়ার শক্তিশালী উপস্থিতি থাকায় তুরস্কের জন্য কাজটি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আফ্রিকা মহাদেশে তুরস্কের কৌশলগত অবস্থান বাড়াতে সম্প্রতি আঙ্কারা বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
তুরস্কের বাইরে তাদের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কয়েকটি চুক্তির পর মোগাদিশু তুরস্কের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে সোমালিয়ায় অফশোর তেলের খনি সন্ধান ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেখানে একটি নতুন মিসাইল পরীক্ষাকেন্দ্র চালুর চেষ্টা করছেন এরদোয়ান।
অনেক আগ থেকেই আফ্রিকান ইনিশিয়েটিভ পলিসি গ্রহণ করার মাধ্যমে অঞ্চলটিতে বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা চুক্তিগুলো দৃঢ় করার উদ্দেশে কাজ করছে তুরস্ক। এই নীতির অধীনে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এরাদোয়ান সরকার বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
বাজারে পণ্যের চাহিদা ও ব্যবসায়িক লাভের কারণে আফ্রিকা মহাদেশ তুরস্কের ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। তবে মহাদেশটির বাজারে তুরস্ককে লড়াই করতে হচ্ছে রাশিয়া-চীনসহ
মস্কো-বেইজিংয়ের শক্তিশালি অবস্থানের পরও জুলাই মাসে তুরস্কের জ্বালানিমন্ত্রী আলপারসলান বায়রাকতার সোমালিয়ার সাথে একটি হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান ও উৎপাদন চুক্তি সই করেন। সোমালি উপকূলের তিনটি ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের একচেটিয়া সুযোগ পেয়ে যায় তুরস্ক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ নাগাদ অথবা অক্টোবরের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে অনুসন্ধান জাহাজ পাঠাতে পারে আঙ্কারা। সোমালিয়ায় কমপক্ষে তিন হাজার কোটি ব্যারেল তেল ও গ্যাসের মজুত রয়েছে।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তুরস্কের সংস্থাগুলোকে চীনের সংস্থাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। বিশেষত বড় প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয় অর্থায়নে চীন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শুধুমাত্র ২০২৩ সালে, আফ্রিকায় চীনের মোট বিনিয়োগ ২৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। সেখানে তুরস্কের বিনিয়োগ প্রায় এক হাজার কোটি ডলার।
আফ্রিকায় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর তালিকায় রাশিয়া শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এই তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছে তুরস্ক। নাইজেরিয়ার কাছে যুদ্ধ হেলিকপ্টার বিক্রয় ও প্রশিক্ষণ বিমানের পাশাপাশি আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে চালকবিহীন টিবি২ বায়রাকতার ড্রোন বিক্রির মাধ্যমে তুরস্ক সাব-সাহারান আফ্রিকার চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারীতে পরিণত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, তুরস্ক আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশের জন্য নিজেদের একটি প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করছে। দেশটির সংসদ সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে সোমালিয়ায় দুই বছরের জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েনের আইন অনুমোদন করেছে। আফ্রিকা মহাদেশে তুরস্কের নতুন এই উত্তানে মাথা ব্যথা বাড়ছে চীন-রাশিয়ার।
মন্তব্য করুন