আপদ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কায় শনিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই বছর আগে গণবিক্ষোভের মুখে পতন ঘটে গোতাবায়া রাজাপাকসে সরকারের। এরপর এতদিন ধরে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে সংকট কাটিয়ে ওঠায় নির্বাচন আয়োজন করে শ্রীলঙ্কা। সেই নির্বাচনে ভেলকি দেখাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ রাজনীতিক অনুড়া কুমারা দিসানায়েকে।
এখনও ভোটের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত গণনা হওয়া ভোটে ৫৩ শতাংশ পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন দিসানায়েকে। শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কমিশনের তথ্য মতে, ২২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাজিথ প্রেমাদাসা। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।
নির্বাচনে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হচ্ছে, এ তিনজনের মধ্যে। ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটার রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, শনিবারের নির্বাচনে প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সেই ভোটেই ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে এই রাজনীতিকদের। তবে গণবিক্ষোভে বড় ভূমিকা রাখা দিসানায়েকে, সবাইকে পেছনে ফেলেছেন নির্বাচনী এই দৌড়ে।
দিসানায়েকে জনতা বিমুক্তি পেরেমুনা-জেভিপি পার্টির প্রধান হলেও নির্বাচনে লড়েছে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার-এনপিপি জোটের প্রার্থী হয়ে। মার্ক্সবাদী রাজনীতি করা দিসানায়েকের পার্টি ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের পক্ষে বেশ সরব। পার্লামেন্টে বর্তমানে তিনটি আসন রয়েছ জেভিপির। তবে দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপের অঙ্গীকার এবং গরিবপন্থি নীতির কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন দিসানায়েকে।
নির্বাচনের মাঠে ভেলকি দেখানো দিসানায়েকে রাজনীতির ময়দানে নতুন নয়। ২০২২ সালের গণবিক্ষোভ, যা আরাগালায়া নামে পরিচিত, সেই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন দিসানায়েকে। কোনো দলই ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার দাবি না করলেও আলজাজিরা জানিয়েছিল, জেভিপি ওই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। ঢুকতে থাকা অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে এমন আন্দোলনেই পতন ঘটেছিল গোতাবায়া রাজাপাকসের।
গোতাবায়া পালিয়ে গেলে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের শূন্যতা দেখা দেয়। সেই সুযোগটাই দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন দিসানায়েকে। সমাজে ব্যাপক সংস্কারের জন্য সরব হয় জেভিপি। সামাজিক ন্যায় বিচার ও দুর্নীতির মতো ইস্যুতে জেভিপির এমন জোরালো অবস্থান, শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের কাছে দিসানায়েকে জনপ্রিয় করে তোলে। আর তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ব্যালটে।
মন্তব্য করুন