টানা কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার মিসাইল দিয়ে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। কয়েক দিন আগেও উত্তর কোরিয়ার মিসাইল দিয়ে কিয়েভে হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় বাবা-ছেলে নিহত হওয়ার কথাও জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। চারটি কেএন-২৩ মিসাইল দিয়ে এই হামলা চালানো হয়। এই মিসাইলগুলো উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকেই পেয়েছে রাশিয়া।
উত্তর কোরিয়ার দাবি, তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতে দেখা যায়, সম্প্রতি রাশিয়ায় ১১ হাজারের বেশি কনটেইনার পাঠিয়েছে পিয়ংইয়ং। গেল সেপ্টেম্বরে ভ্লাদিভোস্তকে কিম জং উন ও ভ্লাদিমির পুতিন সাক্ষাৎ করেন। এরপরই দুই দেশ একে অপরকে সহযোগিতার ব্যাপারে সম্মত হয়।
খবর বের হয়, রাশিয়াকে গোপনে মিসাইল এবং আর্টিলারি শেল সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে উত্তর কোরিয়া। বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র এবং মিসাইল প্রযুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুতিন। এরপর গেল জুনে পিয়ংইয়ং সফর করেন পুতিন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষার একটি ধারা রেখে চুক্তি সই হয়। জুন মাসের আগ পর্যন্ত পিয়ংইয়ংয়ের একমাত্র সামরিক মিত্র ছিল চীন। কিন্তু ওই চুক্তির পর সেই তালিকায় যুক্ত হয় রাশিয়াও।
অধিকাংশ বিশ্লেষকের বিশ্বাস, মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে বেশ চিন্তিত বেইজিং। গেল জুনে নিউইয়র্ক টাইমসে ডেভিড পিয়ারসন ও চোয় স্যাং-হুন বলেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা চুক্তি চীনের নতুন মাথাব্যথার কারণ। মস্কো-পিয়ংইয়ং কাছে আসলে, স্বাভাবিকভাবেই বেইজিংয়ের ওপর উত্তর কোরিয়ার নির্ভরতা কমবে। আর কিম জং উনও নাকি এমনটাই চাইছিলেন।
চীনের ওপর উত্তর কোরিয়ার নির্ভরশীল কতটা, তা পরিসংখ্যানই বলে দেয়। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, উত্তর কোরিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯৫ শতাংশই চীনের সঙ্গে হয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়া-রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্র ও প্রযুক্তি চুক্তি হওয়ার পর সেই চিত্র বদলে যেতে পারে। চীন খুব ভালো করেই জানে উত্তর কোরিয়ার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাই রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হলেও খুব সহসাই চীনের হাত ছাড়বে না উত্তর কোরিয়া।
দেশটির নাম উত্তর কোরিয়া বলেই হয়ত, চীন এতটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারে। কেননা বিশ্লেষকদের মতে, কিম জং উনের ওয়ার্কার্স পার্টিকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জুনিয়র সদস্য হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে বেইজিং। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভরশীল। তাই বেইজিং খুব ভালো করেই জানে, রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক খুব বেশিদূর এগোতে পারবে না। আর বেইজিং এটাও বিশ্বাস করে পুতিন বা কিম কেউই চীনের সঙ্গে বেইমানি করবে না।
মন্তব্য করুন