শত্রুঘেরা মধ্যপ্রাচ্যে নিজেকে শক্তিশালী করে তোলা ছাড়া ইরানের বিকল্প নেই। জাতিগত পার্থক্য ছাড়াও অন্য ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে অনেকটাই একঘরে তারা। আর তাই, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জোয়াল কাঁধে নিয়েই একের পর এক শক্তিশালী মারণাস্ত্র বানিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানি ড্রোন তো রীতিমতো গেম চেঞ্জার হয়ে দেখা দিয়েছে। এবার বন্ধু রাষ্ট্রকে আলোচিত সুইসাইড ড্রোন দিয়ে আঞ্চলিক রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে চাইছে ইরান।
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া, দুই দেশের সঙ্গেই ইরানের সীমান্ত রয়েছে। আবার ইরানের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আজারবাইজানের বংশোদ্ভূত। কিন্তু এত কিছুর পরও ইরানের সমর্থনের পাল্লা কিন্তু আর্মেনিয়ার দিকেই ভারী। আর তাই সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে ৫০ কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি করেছে ইরান।
আর্মেনিয়ার কাছে বিক্রি করা অস্ত্রের তালিকায় রয়েছে কুখ্যাত সুইসাইড ড্রোন। তবে তেহরানের এক পদক্ষেপে গোস্যা হতে পারে আজারবাইজান।
১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দুটি বড় যুদ্ধে জড়িয়েছে। ২০২০ সালে আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে আজারবাইজান। গত বছর নার্গোনো-কারাবাখ অঞ্চল দখল করে নেয় আজারবাইজান, এই অঞ্চল ঘিরেই দীর্ঘদিন ধরে আর্মেনিয়ার সঙ্গে বাকুর দ্বন্দ্ব চলছে।
ইরান এর আগে বারবার বলেছে, এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সীমানা পরিবর্তন কখনও মানবে না তারা।
জানা গেছে, আর্মেনিয়াকে শাহেদ 136, শাহেদ 129, শাহেদ 197, মোহাজেরের মতো ড্রোন সরবরাহ করছে ইরান। আর থার্ড খোরদাদ, মজিদ, ফিফটিনথ খোরদাদ ও আরমানের মতো আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল ব্যবস্থা কিনে নিচ্ছে আর্মেনিয়া।
তবে আর্মেনিয়া বা ইরান কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তির বিষয়ে মুখ খোলেনি। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ফারজিন নাদিমি বলেছেন, ককেশাস অঞ্চলের দেশটির জন্য এত বড় অস্ত্রচুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আর্মেনিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ৮১ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর প্রতিরক্ষা খাতের জন্য আর্মেনিয়ার বরাদ্দ ছিল প্রায় ১৪০ কোটি ডলার। তাই ইরানের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে এই বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করছে আর্মেনিয়া।
এত বিপুল পরিমাণ অর্থ আর্মেনিয়া পরিশোধ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ নিয়ে দেনা মেটাতে পারে আর্মেনিয়া।
তবে আর্মেনিয়াকে শুধু সুইসাইড ড্রোন এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই সরবরাহ করছে না ইরান। দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা সহযোগিতার মতো বিষয়ও রয়েছে। ইরান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে গভীর সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি আর্মেনিয়ার মাটিতে ইরানের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
তবে ইরান-আর্মেনিয়ার এমন অস্ত্রচুক্তিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠবে তিন দেশ। আজারবাইজান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কও এমন চুক্তি সহজে হজম করবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।