অবশেষে নিজ দেশের মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য এ ক্ষমা চেয়েছে লঙ্কান সরকার। ইতোমধ্যে ক্ষমা চাওয়াসংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা। বুধবার (২৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এবং দ্য হিন্দু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী। ২০১৯ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর অন্যান্য দেশের মতো শ্রীলঙ্কাতেও ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
ওই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও মত দিয়েছিল- করোনায় মৃতদের লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করা নিরাপদ। শুধু তাই নয়, মৃতদের লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফন করা নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরাও মত দিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন লঙ্কান সরকার মুসলিমদের লাশও বাধ্যতামূলক পোড়ানোর নির্দেশ দেয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুসলিমরা।
এর প্ররিপ্রেক্ষিতে দেশের মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকার। মঙ্গলবার দেশটির সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছে দেশের মন্ত্রিসভা। মহামারির সময় লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে সরকারের এ নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সব সম্প্রদায়ের কাছে ‘সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন।
শ্রীলঙ্কার মুসলিম প্রতিনিধিরা সরকারের এ ক্ষমাপ্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা বলেছেন, তাদের সমগ্র সম্প্রদায় এ ঘটনার আঘাত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন।
মূলত করোনা মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সরকারই সে সময় এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বর্তমান সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আইন করা হবে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতি লঙ্ঘন না করা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।
শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম ও রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ। দেশটির জনসংখ্যার ৭০.২% বৌদ্ধধর্ম চর্চা করেন। এদের অধিকাংশই প্রধানত থেরবাদ চিন্তাধারার অনুসারী। দেশটিতে অনুসারীর দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হিন্দুধর্ম। ইসলাম দেশটির তৃতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ধর্ম। সুন্নি এই মুসলিম জনগোষ্ঠী ইমান শাফিঈ মাজহাবের অনুসরণ করে। আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশটিতে ইসলাম ধর্মের প্রচার ঘটায় মূলত এই জনগোষ্ঠী ইমাম শাফিঈর অনুসারী।
মন্তব্য করুন